পড়া বুঝিয়ে নিতে চেম্বারে আসেন সেই ছাত্রী, দাবি শিক্ষকের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ নিজ চেম্বারে এক নারী শিক্ষার্থীসহ আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ার ঘটনাটি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। রোববার (১৭ মে) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

অধ্যাপক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, গত ১১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে এক নারী শিক্ষার্থী পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয়ে সহায়তা নিতে তার চেম্বারে আসেন। এরপর প্রায় ৫টা ৪০ মিনিটে চারজন যুবক চেম্বারে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব, সিরাজুল ইসলাম সুমন (নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন), সাজ্জাদ হোসেন সজিব (কালবেলার প্রতিনিধি) ও মোহাম্মদ আতাউল্লাহ (যিনি নিজেকে সমন্বয়ক বলেন)। তারা চেম্বারে ঢুকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা ওই শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন এবং হুমকি দেন।

তিনি জানান, অভিযুক্তরা তাকে বলেন যে, তার ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেবে এবং শিক্ষার্থীর সামাজিকভাবে সম্মানহানি ঘটাবে—এই মর্মে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর তারা প্রথমে ৫ লাখ টাকা দাবি করে, পরে তা কমিয়ে এক লাখ টাকা হাতে এবং বাকি চার লাখ পরে দিতে বলেন। হেদায়েত উল্লাহ দাবি করেন, তারা শিক্ষার্থীকে তালা দিয়ে আটকে রাখে এবং নানা হুমকি দিতে থাকে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি পরে জুবেরি ভবনে গিয়ে এক লাখ টাকা তুলে দেন। পরদিন আরও দুই লাখ টাকা দেন। সুমন প্রথম দফায় এক লাখের সঙ্গে অতিরিক্ত আড়াই হাজার টাকাও নেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এছাড়া তিনি জানান, পরে জানতে পারেন, তাদের এই তথাকথিত অভিযানে তারই ফ্যাকাল্টির এক শিক্ষক জড়িত, যিনি অভিযুক্তদের তথ্য দিয়েছেন। সেই শিক্ষকও নাকি তার কাছ থেকে কমিশন পাওয়ার আশায় এই কাজ করেন।

ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর হেদায়েত উল্লাহর বহিষ্কারের দাবিতে ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষ—অধ্যাপক ও শিক্ষার্থী এবং অভিযুক্ত সাংবাদিকরাও পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন।

ওই নারী শিক্ষার্থী তার বক্তব্যে বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তিনি স্যারের সঙ্গে দেখা করতে চেম্বারে গিয়েছিলেন। পড়াশোনার সময় সন্ধ্যা হয়ে গেলে হঠাৎ কয়েকজন যুবক চেম্বারে প্রবেশ করে এবং তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে। ওড়না খুলে গেলে তিনি আতঙ্কে টেবিলের নিচে লুকান। তাদের হুমকিতে তিনি গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে বের হন। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ বাধ্য হয়ে অর্থ দেন বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, সাংবাদিক পরিচয়দানকারী সাজ্জাদ ও সুমন তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেন, এক স্যারের কাছ থেকে খবর পেয়ে প্রক্টর অফিসের অনুমতি নিয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান। চেম্বারে ঢুকে প্রথমে অন্ধকার কক্ষের ভেতর হেদায়েত উল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে টেবিলের নিচে লুকানো অবস্থায় ছাত্রীকে দেখতে পান। ছাত্রীটি অনুরোধ করেন, ভিডিও যেন প্রকাশ না করা হয়, কারণ এতে তিনি আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় তারা তখন ভিডিও প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেন।

এই ঘটনা ঘিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট মহল।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতে গ্রেফতার আওয়ামী লীগের ৩ নেতা May 18, 2025
উখিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনার ছবি May 18, 2025
img
মায়ের সঙ্গ ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না আরাধ্যার May 18, 2025
img
গোলাম আজমকে পরাজিত করেই বাংলাদেশের জন্ম: তাজনূভা জাবীন May 18, 2025
এবার গুলিস্তানে বের হলো আওয়ামী লীগ, ১১ জন পাকড়াও! May 18, 2025
img
নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ May 18, 2025
img
১৮ অঞ্চলে নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত May 18, 2025
img
‘নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না’ May 18, 2025
দেড়শ টাকার আম বিক্রি সাড়ে ৩ টাকায়! May 18, 2025
img
রাতের আঁধারে বিএসএফের পুশইন,সীমান্তে আতঙ্ক May 18, 2025
img
১০ বছর পর ইরান থেকে সৌদির হজ ফ্লাইট চালু May 18, 2025
কালো জাদু বিতর্কে বলিউডের যেসব নায়িকা May 18, 2025
img
রাওয়ালপিন্ডিতে সাকিবদের ম্যাচ অনিশ্চয়তায় May 18, 2025
img
টাইব্রেকারে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের May 18, 2025
img
মিরপুরের শ্যামল পল্লী বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে May 18, 2025
img
ভার্চুয়াল জগতে নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব : সাইফুল হক May 18, 2025
img
মঞ্চ থেকে নামতেই তামান্নাকে ঘিরে ধরেন ভক্তরা May 18, 2025
img
খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ May 18, 2025
‘বিদেশি নাগরিকত্বের’ অভিযোগে মুখ খুললেন খলিলুর রহমান May 18, 2025
img
নুসরাতের সাথে অন্যায় হচ্ছে, দাবি খায়রুল বাসারের May 18, 2025