আমাদের সমুদ্র সোনার খনি:‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের একটা অসীম সমুদ্র আছে। সমুদ্র একটা সোনার খনি। আমরা কখনো সোনার খনি হিসেবে দেখিনি। আমাদের সেখানে অল্প কিছু মেরিটাইম কার্যক্রম ছাড়া কিছুই নেই।

আজ বুধবার (২৮ মে) জাপানের স্থানীয় সময়ে রাতে টোকিওর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, সমুদ্রের ওপর নির্ভর করে আমাদের নতুন একটি অর্থনীতি তৈরির জন্য এটি সুবর্ণ সুযোগ। এই সমুদ্র বাকি বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ দিচ্ছে। জাপান আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজের সঙ্গে যুক্ত।

তিনি আরও বলেন, জাপানের একার পক্ষে সম্ভব আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে অর্থায়ন করে এখানকার মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে। এই অঞ্চলের অর্থনীতি রাতারাতি বদলে যাবে। আমরা জাপানের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চাই। আমাদের জাপানের সহায়তা প্রয়োজন। আমরা এখনো জানি না কতটুকু করতে পারবো, তবে আশা রাখি, আমরা সফল হবো।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্র ও তরুণদের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ একটি নতুন বাংলাদেশ হিসেবে উদীয়মান হয়েছে। সবকিছু প্রত্যাখ্যান করে তারা জবাব দিলো, যথেষ্ট হয়েছে। তারা রাস্তায় মরলো কিন্তু পিছু হটেনি। যতই গুলি করা হচ্ছিল, ততই তরুণরা রাজপথে নেমে আসছিল। এক সময় ঢাকার দিকে জনস্রোত এগিয়ে এলো। এতে বিগত সরকার মনে করলো, তাদের বাঁচার আর পথ নেই। সে জন্য পালিয়ে গেলো।

তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা ঘোষণা দিলো, নতুন বাংলাদেশ গড়ার। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো, সেই কাজকে বাস্তবে রূপান্তর করার। কাজটি খুবই কঠিন। সবাই সবকিছুতে সম্মত হয় না। তবে দেখে ভালো লাগছে, জনগণের চাওয়াকে তারা বুঝতে পেরেছে। পুরো দেশকে সবকিছুতে রাজি করাতে একটি আওয়াজ যথেষ্ট।

যুদ্ধ-বিধ্বস্তের মতো একটা দেশ হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, ব্যাংকিং, ব্যবসা সবদিকেই বিধ্বস্ত ছিল। বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। ব্যাংক খালি হয়ে গিয়েছিল। কোথা থেকে শুরু করতে হবে জানা ছিল না।

তিনি আরও বলেন, ১৫ বছরের ধ্বংসযজ্ঞ, অপশাসন, গুম ও ভয়ানক যত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো থেকে বেরিয়ে আমাদের নতুন কিছু স্মৃতি তৈরি করার প্রয়োজন ছিল। ১০ মাস এসবের মধ্যে দিয়ে গেছে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, অনেক পথ পেরিয়ে এসেছি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ব্যাংকগুলোকে ঠিক করা হচ্ছে, বিদেশি ঋণ শোধ করছি, বাইরে থেকে প্রাপ্ত অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করছি। এখন কিছুটা স্বস্তির জায়গায় আছি আমরা। এখন কিছুটা শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে। আমাদের তিনটি কাজ দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সংস্কার। আগে যা হয়েছে সবই ভুল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা আসলে নতুন একটা রাষ্ট্র করার মতো বিষয়। দ্বিতীয় কাজ হলো, তাদের বিচার, যারা এসবের জন্য দায়ী। সব সাক্ষ্য প্রমাণ একত্রিত করে বিচার নিশ্চিত করা এটা খুবই কঠিন কাজ। তৃতীয় কাজ নির্বাচন। নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেবে, আমরা তাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করে দেবো।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক নেতারা অনেক অধৈর্য, তারা বারবার নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে, ক্ষমতায় বসতে চাচ্ছে। আমি তাই অনেক সময় ধরেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলছি, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে। এটা নির্ভর করবে কত দ্রুত আমরা সংস্কারগুলো করতে পারি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যদি সংস্কারকাজ ধীর গতিতে হয়, তাহলে সময় বেশি লাগবে। বেশি সময় বলতে আবার অনির্দিষ্টকাল না, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই। তরুণরা এখনও অধৈর্য, তারা এখনই ফলাফল দেখতে চায়।

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ একটি চমৎকার দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছোট্ট একটি দেশে যেখানে ১৮ কোটি মানুষের ঘর। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ একটা দেশ। এই জনসংখ্যার অর্ধেকই তরুণ। এটি আরেকটি প্রেক্ষাপট তুলে ধরে। তারা সবাই প্রযুক্তির কাছাকাছি আছে। সবার কাছে স্মার্ট ফোন আছে, ইন্টারনেট আছে। পুরো বিশ্ব সম্পর্কে তাদের ধারণা আছে। সুতরাং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনেক দূরের। বিগত সরকার তাদের খুশি করার জন্য আগ্রহী ছিল না, কারণ তারা নিজেরাই নিজেদের খুশি করার কাজে ব্যস্ত ছিল।

তিনি আরও বলেন, জাপানে যখন আসছিলাম, তখন শুনলাম এ দেশে নাকি লোক লাগবে। আমি বললাম, এটাই সুযোগ নিয়ে নিন। আমাদের আনুষ্ঠানিক আলোচনায় এটি নিয়েই কথা বলবো, এই তরুণদের কীভাবে জাপানে নিয়ে আসা যায়। আপনাদের লোক দরকার, আমাদের লোক আছে। এটি বাংলাদেশকে দুইভাবে লাভবান করবে। আয়ের মাধ্যমে জীবনমান বদলে যাবে, এখান থেকে শিখবে এবং একইসঙ্গে প্রযুক্তির সম্মুখভাগে কাজ করার সুযোগ পাবে।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাপান বাংলাদেশের সঙ্গে অত্যন্ত গভীরভাবে যুক্ত আছে। অনেক বড় বড় প্রকল্প আছে বাংলাদেশে। আমরা এ জন্য জাপানের কাছে ঋণী। তবে এখানে আরও সুযোগ আছে। সেগুলো নিয়ে আলাপ করবো।

এফপি/ এস এন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিএনপি নেতার বাড়ি ভাঙচুর, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মিজান গ্রেফতার May 30, 2025
img
অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের গ্রুপে সিঙ্গাপুর May 30, 2025
img
জোয়ারের পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ১ জনের May 30, 2025
img
পটুয়াখালীতে একদিনে রেকর্ড ১১৬.৮ মিমি বৃষ্টিপাত May 30, 2025
img
বন্ধু ইউনূসকে মাহাথির মোহাম্মদের পরামর্শ May 30, 2025
img
বৃষ্টিতে ভেসে গেল ফাইনাল,টসেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা May 30, 2025
img
জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিতে বাধা হয়,এমন কোনো মন্তব্য করা যাবে না May 30, 2025
img
যেসব কারণে বোর্ড পরিচালকদের অনাস্থা ফারুকের ওপর May 30, 2025
img
আমি যাদের সাথে কাজ করেছি, সকলেই পরে মেগাস্টার হয়েছেন May 30, 2025
img
‘পরম সুন্দরী’র টিজার দেখে নেটিজেনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া May 30, 2025
img
ঈদের চাঁদ দেখলে রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তেন May 30, 2025
img
বিছানায় মেসি যেন মৃত এক মানুষ :আর্জেন্টিনার মডেল জোয়ানা গনজালেজ May 30, 2025
img
জয়ার পোস্টে বদলে গেল বুবলির সব কিছু! May 30, 2025
img
পবিস কর্মীদের কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা May 30, 2025
img
শাপলা চত্বরের ঘটনায় আমরা সরাসরি সমর্থন দিয়েছিলাম: জিএম কাদের May 30, 2025
img
শহিদ জিয়ার সেই বিএনপি খুঁজে পাচ্ছি না:আসিফ May 30, 2025
img
জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় জরুরি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে ডিএনসিসি May 30, 2025
img
যেসব খাবার হাড়ের ক্ষতি করে May 30, 2025
img
অবসরে যাচ্ছেন অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ May 30, 2025
img
৬৮ বস্তা চালসহ চারজন ইউপি সদস্য আটক May 30, 2025