মোবাইল ব্যাংকিং নগদ-এর ১৫০ কোটি টাকা বেহাত এবং নগদে স্ত্রীসহ স্বজনকে চাকরি দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পিএ ও বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আতিক মোর্শেদ।
শুক্রবার (৩০ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে এ-সম্পর্কিত এক পোস্ট দেন তিনি।
আতিক মোর্শেদের হুবহু ফেসবুক পোস্ট:
আমি আতিক মোর্শেদ, বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফায়েজ তায়েব আহমেদ মহোদয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছি।
'নগদ' ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়েরই একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজ সার্ভিসের দায়িত্ব 'থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি ' নামে একটি প্রতিষ্ঠানের।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর ২১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আদেশ জারি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই প্রশাসক নিয়োগের আদেশের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে নগদের স্বতন্ত্র পরিচালক মো. শাফায়েত আলম গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। যাতে নগদে প্রশাসক নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২৫ এর ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তা খারিজ করে রায় দেন। পরে হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে শাফায়েত আলম আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যা আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ৭ মে ওঠে। সেদিনই আপিল বিভাগ নগদে প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন ।
আলোচনার শুরু মূলত এখান থেকে...
এই মাসের ৭ মে আদালতের রায়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক 'নগদ' থেকে চলে যান এবং শাফায়াত সাহেব নিজেকে নগদের সিইও হিসেবে ঘোষণা করেন। নগদ থেকে এই বিষয়টি আমাদের জানানো হলে ডাক বিভাগ থেকে আমরা কি করতে পারি সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু করি।
আমাদের কাছে তথ্য আসে, শাফায়াত আওয়ামী লীগ গং এর সাথে সংশ্লিষ্ট এবং তিনি নগদের দায়িত্বে থাকলে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
শাফায়তে সাহেব নগদে নতুন করে কোনো প্রকার অস্থিরতা যাতে না সৃষ্টি করতে পারেন সেজন্য তাকে গ্রেফতারের কথা আমিই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাই এবং সিআইডির সহায়তা নেই। ৭ তারিখের পর থেকে শাফায়াতকে গ্রেফতারে সিআইডি কর্মকর্তারা আমাদের সার্বিক সহায়তা করছেন। একটি সূত্র মতে আমরা জানতে পারি, তিনি দেশের বাইরে চলে গেছেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে গত ১৮ই মে নগদের ডেপুটি সিইও মুইজ সাহেবকে সিআইডি তার বাসা থেকে সিআইডি অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তার ফোন, ল্যাপটপ জব্দ করেছে এবং তদন্ত এখনো চলমান।
যাই হোক, এরপর আমরা ডাক বিভাগ থেকে তড়িৎ পদক্ষেপ নেই এবং শাফাতকে সরিয়ে গত ২৯ মে ডাক বিভাগ থেকে ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব আবু তালেব সাহেব কে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয় যাতে করে নতুন কোনো লুটপাট না হয়।
এই ছিল সংক্ষিপ্ত মূল ঘটনা।
আমার বিরুদ্ধে মানব জমিনের রিপোর্টার লিখেছেন ' আমি নগদে নিয়মিত অফিস করি। সিইও এর চেয়ারে বসি '। এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা।
আমি নগদে গিয়েছি মাত্র দুইবার, ১৮ মে এবং ২০ মে। তাও অফিসিয়াল কাজে। সেখানে ডাক বিভাগের কর্মকর্তারাও ছিলেন। নগদের সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করলেই তা প্রমাণিত হবে।
সেই মিটিং এ নগদ কে কিভাবে স্টেবল করা যায়, কার্যক্রম সচল রাখা যায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলাম মাত্র।
এই মিটিং কে জনৈক সাংবাদিক সাহেব "রুদ্ধদ্বার বৈঠক" হিসেবে উপস্থাপন করেছেন যা হাস্যকর।
আমার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ ' আমি আমার ওয়াইফ কে নগদের একটি পদে বসিয়েছি'
আমার বক্তব্য হলো- আমার ওয়াইফ স্বীয় মেধা এবং যোগ্যতায় নগদে আবেদন করেছেন।
নগদ কর্তৃপক্ষ তার পূর্বের অভিজ্ঞতা, মেধা এবং যোগ্যতার মানদণ্ড অনুসরণ করে তাকে সেখানে শর্ত সাপেক্ষে অস্থায়ী চাকুরী দিয়েছে। উল্লেখ্য, আমার ওয়াইফ ইতোপূর্বে গুলশানে একটি স্বনামধন্য ল'ফার্মে ৩ বছর যাবৎ কর্পোরেট লয়ার হিসেবে কাজ করেছেন।
তার একাডেমিক রেজাল্টও কর্পোরেট কোম্পানিগুলোতে ফাইট দেওয়ার মতো। তিনি তার নিজের যোগ্যতাতেই সেখানে চাকরি করছেন। যদিও এটা কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট।
আমার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ 'আমি নাকি নগদ থেকে ১৫০ কোটি টাকা সরিয়েছি'
টাকা সরানোর অভিযোগ পাওয়ার পর ডাক বিভাগ থেকে নগদের কাছে পরিচালনা ব্যয় ও যাবতীয় বিলসহ ২ মাসের হিসাব জানাতে চেয়েছিলাম। সেখানে জানতে পারি সব মিলিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে ওঠানো হয়েছে আনুমানিক ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোম্পানির পরিচালনা ব্যয়, বেতন-ভাতা, ভাড়া, ভেন্ডর বিল সবই রয়েছে।
মানবজমিনকে অনুরোধ করবো অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করতে, অর্থ সারানোর খাত গুলো উল্লেখ করতে। কোনো একক সংস্থা নয়; নতুন সিইওকে ত্রিপাক্ষিক একটা ফরেন্সিক করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে। উল্লেখ্য যে, ১১-২৭ মে সময়কাল ছাড়া বাকি সময় নগদের পরিচালনা বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই ছিল।
আমি বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোকে আহবান জানাবো তারা যেন এই ইস্যুতে অধিকতর তদন্ত করেন।
আমি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমার মন্ত্রণালয় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করেছি।
আর আমার বিরুদ্ধে এরকম অপপ্রচার করে আমার পথচলাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
এসএম/টিএ