টেলিকম খাতকে করমুক্ত করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের দাবি পূরণে কানেক্টিভিটি থেকে জেনারেশন সার্ভিস ট্রান্সফরমেশনের জন্য নতুন পলিসি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ-টিআরএনবি আয়োজিত ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং লাইসেন্সিং নীতি সংস্কার’ বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, নীতিমালাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে যৌক্তিক পরামর্শগুলো যেমন বিবেচনা করতে হবে একইসাথে সরকারের ভালো উদ্যোগকেও স্বাগত জানানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, কোনো ঢালাও অভিযোগ নয়, আমি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলবো। অপারেটরগুলো ৪০০ কোটি টাকা লভ্যাংশ করলেও তারা সন্তুষ্ট নন। আপনাদের দেশের স্বার্থও দেখা উচিত।
আলোচনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান বলেন, টেলিকম পলিসি সরকারের এখতিয়ার। অরাজক পরিস্থিতির উত্তরণ থেকে সরকার এই পরিবর্তন আনছে। তাই অংশীজনদের নিয়েই গাইড লাইন করবে।
এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে তা অন্তত ১৫ বছরের জন্য টেলিযোগাযোগ খাতকে সুরক্ষা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. জহুরুল ইসলাম।
টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে’র সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ জুলফিকার।
এছাড়া আলোচক হিসেবে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব (রুটিন) মো. জহিরুল ইসলাম এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী।
টেলিকম খাত থেকে ব্যবসায় প্রতিনিধি হিসেবে মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে অংশ নিয়েছেন গ্রামীণফোন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান, রবি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াজ রশীদ, বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইওহান বুসে এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ।
গোলটেবিল সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটবের মহাসচিব মোহাম্মাদ জুলফিকার জানান, ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে টেলিকম অপারেটর। সাড়ে ৬ কোটি সোশ্যাল মিডিয়ায় সংযুক্ত। তারপরও দেশের ৯ কোটির মতো মানুষ এখনো নেটওয়ার্কে সংযুক্ত নন। তারা ডিজিটাল সেবা পাচ্ছেন না। স্থানীয় পর্যায় ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ ও লক্ষ্য পূরণে সময় বেঁধে দেওয়া রীতিমতো ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
নীতিমালার বা কি অংশকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন লাইসেন্সিং কাঠামো প্রযুক্তি-নিরপেক্ষ করার পাশাপাশি নীতিমালায় লাইসেন্স তিনটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। একই লাইসেন্সের আওতায় একাধিক ধরনের সেবা দিতে পারবেন অপারেটররা। ভয়েস, ডেটা (ইন্টারনেট), ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভ্যাস) ও ওভার-দ্য-টপ (ওটিটি) সার্ভিস দেওয়ার সুযোগ থাকছে নতুন লাইসেন্স নীতিমালায়। এটা এই খাতের বিকাশে সহায়তা করবে। তবে শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ না রাখায় উন্নয়নের গতি স্লোথ হবে।
ফাইবার অ্যাট হোম সিআইও সুমন আহমেদ সাবির বলেন, গত সাত বছরে এই খাতে কত টাকা বিনিময়োগ হয়েছে তা হিসাব করা দরকার। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ খরচ সাশ্রয়ী পথ বেছে নিতে হবে।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির বলেন, আমি মনে করি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কনসিস্টিন্সি, ক্যাপাসিটি, কোলাবরেশন ও কো-অর্ডিনেশন দরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ থাকা দরকার। প্রতি বছর মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক চালু রাখতে ৬০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।
বিশ্বব্যাংক পরামর্শক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পলিসি সঠিক পথেই আছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে পিওর ডিজায়ার নাই। মুক্তবাজার হিসেবে মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা থাকা উচিত না।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, দেশের মানুষের মোট চাহিদা ৭.৫ টেরাবাইট। এর ৬৫-৭০ শতাংশ প্রয়োজন মেটায় আইএসপিরা। এজন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। কিন্তু মোবাইল অপারেটরদের ৩৫ শতাংশ বাজার শেয়ার থাকলেও তাদের কর দিতে হচ্ছে না। এই বৈষম্য দূর করা দরকার।
কেএন/টিকে