মাইলস্টোন শিক্ষিকা মাসুকার শেষ বিদায়ে গোসল ও কাফন সম্পন্ন করেছেন কোয়ান্টাম দাফন কার্যক্রমের দাফনকর্মীরা। মমতার পরশে নিজ হাতে এমন একজন মহতী মানুষের গোসল ও কাফনে থাকতে পেরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন দাফনকর্মীরা।
মঙ্গলবার সকালে বার্ন ইউনিট থেকে রাজধানীর কাকরাইলে কোয়ান্টাম হাম্মামে আনা হয় মাসুকার মরদেহ। প্রায় ৮৫ শতাংশ পোড়া ছিল তার শরীর। কোয়ান্টামের দাফনকর্মীরা করোনাসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা আক্রান্ত মরদেহ গোসলে অভ্যস্ত। তবে মাইলস্টোন দুর্ঘটনার শিকার মাসুকা বেগমের শেষ বিদায়ে পাশে থাকতে পেরে দাফনকর্মীরা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাদের চোখে ভেসে ওঠে অর্ধশতাধিক বাচ্চাকে বাঁচানো মানবিক এক মহত্বের দৃশ্য।
সরাসরি গোসলে অংশ নেয়া দাফনকর্মী মহসীনা ফেরদৌসী জানান, 'শিক্ষিকা মাসুমা বেগমকে যখন আমরা গোসলে নিয়েছিলাম তখন মনে হচ্ছিল, আমরা যেন এক পবিত্র আত্মার গোসল করাচ্ছিলাম। এতোগুলো বাচ্চাকে বাঁচানো এই মানুষটি নিশ্চয়ই পবিত্র আত্মার অধিকারী। যত্নের সাথে ওজু গোসল ও কাফন করাতে করাতে আমাদের ভেতর থেকে দোয়া চলে এসেছিল। এরপর আমরা যখন মরহুমার মরদেহ আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করি তখনও সবাইকে নিয়ে স্রষ্টার কাছে দোয়া করেছি।'
মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের প্রাইমারি শাখার বাংলা ভার্সনে ইরেজি শিক্ষক ছিলেন মাসুকা। ঘটনার দিন সকালে মাসুকা বেগম ক্লাস নিচ্ছিলেন। এসময় বিকট শব্দে একটি যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ে। এতে তিনিসহ তার ক্লাসরুমের অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হন। এসময় তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে ক্লাসে থাকা অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দগ্ধ হয়ে রাতেই ঢাকা বার্ন ইউনিটে মারা যান তিনি। মারা যাওয়ার ঠিক আগে পাশের বেডে থাকা আরেক সহকর্মীকে বলে যান, তার মরদেহ যেন সোহাগপুর বোনের বাড়িতে দাফন করা হয়। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের সোহাগপুর গ্রামে বাদ আসর স্থানীয় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, সোমবার দিবাগত রাতে একই দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মাইলস্টোন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ১৪ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ শামীমেরও গোসল ও কাফন সম্পন্ন হয় কোয়ান্টামের হাম্মামে। কোয়ান্টামের দাফনকর্মীরা মনে করেন, একজন মরহুমের শেষ বিদায় হোক যত্ন ও সম্মানের সাথে। এমনি যেকোনো সময়ে একজন মরহুমের শেষ বিদায় জানাতে রাত-দিন প্রস্তুত কোয়ান্টামের দাফনকর্মীরা।
এসএন