বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ভোলায় বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। থেমে থেমে বৃষ্টির পাশাপাশি উত্তাল রয়েছে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী। জোয়ারের পানির উচ্চতা বিপদসীমার ১৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সাত উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) ও শনিবার (২৬ জুলাই) টানা বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর, ভেলুমিয়া, ভেদুরিয়া, কাচিয়া, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, মেদুয়া, ভবানিপুর, তজুমদ্দিনের মলংচরা ও সোনাপুর এবং মনপুরা উপজেলার কলাতলী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় প্রায় ২ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে।
নদীতে প্রবল ঢেউ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ভোলা থেকে লক্ষ্মীপুর, দৌলতখান-আলেকজান্ডার, হাতিয়া-মনপুরাসহ মোট ১০টি রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে ভোলা-ঢাকা রুটে লঞ্চ চলাচল এখনও স্বাভাবিক রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদী বন্দরের পরিবহণ পরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, 'সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি থাকায় অভ্যন্তরীণ সব রুটে লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইলিশা ফেরিঘাটের দুইটি গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফেরি ও যাত্রী পারাপারে চরম বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বিকালের জোয়ারে লো গ্যাংওয়েতে কোমর সমান এবং হাই গ্যাংওয়েতে হাঁটু সমান পানি থাকায় যাত্রীবাহী বাস, কাঁচামাল বহনকারী ট্রাক ও সাধারণ যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মেঘনার ঢেউয়ের আঘাতে সদর উপজেলার শিবপুর, তজুমদ্দিনের স্লুইসগেট এবং চরফ্যাশনের খেজুরগাছিয়াসহ অন্তত ৬টি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে করে আরও বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়নকর্মী মো. ফজলুল হক বলেন, মনপুরা উপজেলার কলাতলী ইউনিয়ন সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। মনির বাজারে জুমার নামাজের সময় কোমর সমান পানি উঠে। নামাজ শেষে দেখা যায়, জুতা-স্যান্ডেল সব ভেসে যাচ্ছে। দোকানপাট, ধানখেত, পুকুর- সব তলিয়ে গেছে।
ভোলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ভোলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে। এজন্য পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
কেএন/টিএ