কলকাতায় অবৈধভাবে বসবাস এবং ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি মডেল ও অভিনেত্রী শান্তা পলকে ঘিরে এবার গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে তদন্তে নেমেছে কলকাতা পুলিশ।
ভারতের হরিয়ানাভিত্তিক ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার কায়দায় শান্তাও কি কোনো গোপন উদ্দেশ্যে কাজ করছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শান্তা পলের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি একবার ভারত-নেপাল-চীন সীমান্ত এলাকায় গিয়ে ভিডিও রেকর্ড করেন। এরপর থেকেই তার কার্যকলাপ নিয়ে সন্দেহ বাড়ে গোয়েন্দাদের।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, শান্তা পল একটি ফেসবুক পেজ খুলে সেখানে পর্যটন ব্যবসার প্রচার করছিলেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি হোটেল ব্যবসা শুরু করেছেন এমন দাবিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কলকাতা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শান্তা পল পশ্চিমবঙ্গ এবং পার্শ্ববর্তী সিকিম রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন এবং সেসব জায়গার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
তিনি বলেন, একজন ট্রাভেল ভ্লগার হিসেবে শান্তা পল সিকিমের নাথুলা পাসে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ভারত-নেপাল-চীন সীমান্তের ছবি তুলেছিলেন। তাঁর কর্মকাণ্ড জ্যোতি মালহোত্রার মতো কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জ্যোতি মালহোত্রা ছিলেন একটি ইউটিউব চ্যানেলের ট্রাভেল ভ্লগার। চলতি বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয় এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-কে তথ্য পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
কলকাতা পুলিশ জানতে পেরেছে, শান্তা পল বৈধ ভিসায় ভারতে প্রবেশ করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশে ফিরে যাননি। বরং ভারতে অবস্থানকালেই তিনি ভুয়া আধার কার্ড ও ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করেন। এই জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে তিনি দীর্ঘদিন কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং বিভিন্ন মডেলিং ও অভিনয়ের কাজ করেন।
এদিকে শান্তা পলের ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছু বাংলাদেশি নথিপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, তিনি কলকাতার গল্ফ গ্রিন এলাকায় এক ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন এবং সেখান থেকেই সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তে আরও জানা গেছে, শান্তা পল গত কয়েক বছরে বাংলা ও তামিল সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন। এমনকি কলকাতার দক্ষিণ উপকণ্ঠে একটি সম্পত্তিও কিনেছেন, যা তার লিভ-ইন পার্টনারের নামে। ওই ব্যক্তি অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা এবং পেশায় মার্চেন্ট নেভির কর্মকর্তা।
এখন পুলিশ খতিয়ে দেখছে, ভারতের গ্ল্যামার জগতে কাজ করতে গিয়ে তিনি কি কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন কিনা, যার ফলে কোনো সন্দেহ ছাড়াই এতদিন মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পেরেছেন।
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, শান্তা পলের কর্মকাণ্ডে গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে তাকে ৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এমকে/টিকে