মায়ানমারে জান্তার বিমান হামলায় বিদ্রোহীদের দখলে থাকা রুবিখনিকেন্দ্রিক একটি শহরে শনিবার অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে। এক স্থানীয় বাসিন্দা ও সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীর এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এএফপি শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। এ সময় গণতন্ত্রপন্থী গেরিলারা দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একত্র হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
প্রথম দিকে এদের বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ কার্যকর ছিল না। কিন্তু ২০২৩ সালের শেষ দিকে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ শুরু করে তারা বিপুল এলাকা দখল করে নেয়, যার মধ্যে রুবি ব্যবসার কেন্দ্র মোগক শহরও রয়েছে।
মায়ানমার মূল্যবান রত্নপাথর ও দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, যা সব পক্ষের কাছেই অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত। এই সম্পদ মূলত প্রতিবেশী চীনে বিক্রি করে যুদ্ধের খরচ জোগানো হয়।
এএফপি জানিয়েছে, জান্তার কোনো মুখপাত্রের সঙ্গে এ হামলার বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় শনিবার সকাল সোটা ৮টার দিকে এই হামলা চালানো হয়। এতে হামলাস্থলেই সাতজন নিহত ও পরে আরো ছয়জন আহতাবস্থায় মারা যায়।
তিনি আরো জানান, নিহতদের মধ্যে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু ও এক মোটরসাইকেলে থাকা বাবা-ছেলেও ছিল।
এ ছাড়া এলাকাটি দিয়ে চলাচলকারী একটি গাড়িও হামলার শিকার হয়। চালকসহ সাতজন আহত হয়েছে।
তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র লোয়ে ইয়াই উও নিহতের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেন। তবে তিনি ১৪ জন আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, সকালবেলা একটি জনবহুল এলাকায় এই বিমান হামলা হয়।
তখন রাস্তায় অনেক মানুষ হাঁটছিল, তাই নিহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।
বিদ্রোহীদের সম্মিলিত আক্রমণে সেনাবাহিনী প্রথমে পিছিয়ে পড়ে। তবে পরে সেনা সংখ্যা বাড়াতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ কার্যকর করা হয়। সম্প্রতি সেনাবাহিনী দেশের মধ্যাঞ্চলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে, যার মধ্যে থাবেইক্যিন নামের সোনার খনির শহরও রয়েছে। এক বছরের লড়াইয়ের পর গত মাসের শেষ দিকে শহরটি পুনর্দখল করে তারা।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার জান্তা সরকার ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছে এবং ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই পদক্ষেপকে তারা সংঘাতের নিরসনের পথ হিসেবে উপস্থাপন করছে। তবে অং সান সু চি এখনো কারাবন্দি থাকায় বিরোধী গোষ্ঠী ও ক্ষমতাচ্যুত সংসদ সদস্যরা এই নির্বাচন বর্জন করছেন।
জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ জুন মাসে এই নির্বাচনকে ‘প্রতারণামূলক’ বলে উল্লেখ করেন, যা জান্তার শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আয়োজন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এমআর/টিকে