জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আজ রবিবার জাতীয় শহীদ মিনারে বড় সমাবেশ করবে। অন্যদিকে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহতদের স্মরণ ও সম্মানে বড় সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই সমাবেশ ঘিরে শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে পারে। দুই পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নগরবাসীর কাছে আগাম দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
রাজধানীর শাহবাগ ও শহীদ মিনারে এই দুই সমাবেশ হবে। এতে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, সায়েন্স ল্যাব, দোয়েল চত্বর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটবে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৩ আগস্ট শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনের এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের এক দফা দাবি ঘোষিত হয়েছিল। যে এক দফার মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি জানিয়ে এসেছিলাম। আমরা পদযাত্রার মধ্যেও তা স্পষ্ট করেছি, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পতন হয়নি। ফলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বা নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণের যে লড়াই, সেটি আমাদের এখনো চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
সে নতুন বাংলাদেশের জন্য আমাদের যে কর্মসূচি ও যে রাষ্ট্র ভাবনার রূপকল্প রয়েছে, সেটি আমরা আগামীকাল (রবিবার) প্রকাশ করব। সেখানে আমাদের নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করা হবে।’
গতকাল জাতীয় নাগরিক পার্টির সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, ‘আমরা পয়লা জুলাই থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা নামক কর্মসূচি পালন করেছি। এ কর্মসূচির মাধ্যমে ৫৯টি জেলায় আমাদের পদযাত্রাটি হয়েছে। আমরা প্রতিটি জায়গায় গিয়েছি, মানুষের কথা শুনেছি। গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া পরিবারের সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করেছি।
আহত যোদ্ধা, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমরা গণমানুষের কাছে গিয়েছি। গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা, দেশ নিয়ে তাদের ভাবনা এবং একটা নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা আমরা শুনেছি।’
তিনি বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমাদের ভবিষ্যত্ কর্মসূচি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা আমরা তৈরি করেছি। শহীদ মিনারে আমরা সেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা এবং আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করব। বিকেল ৪টায় শহীদ মিনারে জনসমাবেশের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হবে। আমরা সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি, আগামীকাল (রবিবার) ঢাকার এই সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের জন্য।’
জুলাই ঘোষণাপত্রে উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে, সরকারের পক্ষ থেকে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সব শক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করতে যাচ্ছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি আমাদের দাবি ছিল, ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদের বিষয়টিও যাতে সুরাহা হয়। জুলাই সনদে বেশির ভাগ জায়গায় ঐকমত্য হয়েছে, কিছু জায়গায় দ্বিমত রয়েছে। ঐকমত্য কমিশন থেকে এখনো জানানো হয়নি যে বিষয়গুলো নিয়ে দ্বিমত রয়েছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কী। এটার বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েও ঐকমত্য কমিশন কথা বলেনি। ফলে বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুরাহা হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা হবে। আমরা বলেছি যে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে।
জুলাই সনদের ভিত্তিতেই পরবর্তী নির্বাচনটি হতে হবে। আমরা নির্বাচিত সংসদের ওপরই সংস্কার কার্যক্রম ছেড়ে দিব না। বরং জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামীর সংসদ গঠিত হবে, গণপরিষদ গঠিত হবে। এবং এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই জুলাই সনদটি কার্যকর করতে হবে। আমাদের জুলাই সনদের দাবিও থাকবে আমাদের আগামীকালকের কর্মসূচিতে। বিচার-সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিও থাকবে। সরকার যাতে ৫ আগস্টের মধ্যেই জুলাই সনদের বিষয় একটা সুরাহা করে। জুলাই সনদ রচিত হয়। এটি সারা দেশের মানুষের দাবি। গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে আমাদের এই পরিবর্তনের রূপরেখাটি আমরা যাতে একসঙ্গে সবাই উদযাপন করতে পারি।’
নতুন বাংলাদেশের ইশতেহারে কী থাকছে, জানতে চাইলে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা আগামীকাল তরুণদের নিয়ে পরিকল্পনা, অর্থনীতি নিয়ে পরিকল্পনা এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পুলিশ-প্রশাসন নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা ইশতেহারের মাধ্যমে জানাব। গত এক বছরের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে আমরা কথা বলব। একই সঙ্গে আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে যে পরিকল্পনা রয়েছে, সে পরিকল্পনাও আমরা প্রকাশ করব।’
২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ ও সম্মানে বড় সমাবেশের আয়োজন করেছে ছাত্রদল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছাত্রদলের পক্ষে জানানো হয়েছে, সংগঠনটির দেশের সব ইউনিটের নেতাকর্মীরা যেন উপস্থিত থাকেন। নিজ নিজ সুবিধা মতো তাঁরা যেন উপস্থিত হন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কিছু কঠোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সমাবেশ নিয়ে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঞ্চ তৈরি করা হবে শাহবাগ থেকে বাংলা মটরের দিকে যাওয়ার মুখে। আর শাহবাগ থেকে কাটাবন, শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন ও শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেবেন। আশা করছি, এই পুরো জায়গায় নেতাকর্মী ভরে যাবে। কয়েক লাখ লোকের সমাগম হবে বলে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ দিন আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছিলাম। সেখান থেকে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাঁদের স্মরণ করে সম্মান জানানো হবে।’
সমাবেশকে কেন্দ্র করে যে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ জন্য ঢাকাবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত জুন মাসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করি। শুরুতে জাতীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের অনুরোধে সমাবেশের স্থান শহীদ মিনার থেকে পরিবর্তন করে শাহবাগে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যস্ত রাজধানীতে কর্মদিবসে সমাবেশের জনভোগান্তি সম্পর্কে আমরা অবগত। যেকোনো ধরনের জনদুর্ভোগের জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করছি। সম্মানিত নগরবাসী বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন।
কেএন/টিএ