পদযাত্রার মাধ্যমে দেশজুড়ে ঘুরে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা জানার পর আজ রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা করতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত এক মাস ধরে পাওয়া দেশের নানা শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের ভাবনা এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার নিরিখে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে দলটির প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করবেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ রোববার (৩ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইশতেহার প্রকাশের পাশাপাশি জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নেরও দাবি জানাবে দলটি।
ইশতেহার ঘোষণা উপলক্ষে সারা দেশ থেকে এদিন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা তরুণদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এনসিপির নেতারা জানান, শহীদ মিনারের সমাবেশ ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে এক থেকে দেড় লাখ নেতাকর্মী জনসমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। পাশাপাশি এদিন প্রায় একই সময়ে কিছুটা দূরেই রাজধানীর শাহবাগে ছাত্রদলের জাতীয় ছাত্র সমাবেশ কর্মসূচি থাকায় কিছুটা উত্তেজনা থাকার কথাও জানান এনসিপি নেতারা। তবে যে কোনো ধরনের সংঘাত এড়িয়ে চলতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। এক কেন্দ্রীয় নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একই দিনে ছাত্রদল ও এনসিপির সমাবেশ হওয়ায় ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে আমরা কিছু কিছু শঙ্কার খবর পাচ্ছি। বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হতে পারে। তবে আমরা যতটা সম্ভব এসব এড়িয়ে চলব।’
শনিবার জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার পতন হয়েছে ঠিকই; কিন্তু ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা এখনো বহাল। সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতেই আমরা রোববার বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা করব। জুলাই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশ নিয়ে তাদের ভাবনা শুনেছি। আমাদের কাছে তাদের প্রত্যাশার কথা জেনেছি। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রূপকল্প তৈরি করব।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আগামীকাল (আজ রোববার) আমরা তরুণদের কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরব। জুলাই অভ্যুত্থানে তরুণদের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
আজ ঢাকায় এইচএসসি পরীক্ষা এবং ছাত্রদলের কর্মসূচি রয়েছে উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, একই এলাকায় দুটি কর্মসূচি থাকায় ভোগান্তি হতে পারে। এ জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করছেন। ছাত্রদল কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করায় তাদের ধন্যবাদ জানান নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘জুলাই পদযাত্রার মূল দাবি ছিল বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের কথা বলেছি। শুনেছি, আগামী ৫ আগস্ট সব রাজনৈতিক পক্ষকে নিয়ে সরকার জুলাই সনদ প্রকাশ করবে। আমরা সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানের প্রস্তাবনা ও তপশিলে উল্লেখ করে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। তবে ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদের বিষয়েও সুরাহা হতে হবে। জুলাই সনদের বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঐকমত্য হয়েছি। বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিশ্চিত হয়েই আমরা সই করব। অবশ্যই এর আইনি ভিত্তি থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে হবে। জুলাই সনদের অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হলেও কিছু বিষয়ে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) রয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে বা বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আমাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি। বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়টি স্পষ্ট হলেই সব দল সনদে স্বাক্ষর করবে।’
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা বলেছি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে এবং সেই সনদের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন এবং সংসদ বা গণপরিষদ গঠন হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় থেকেই জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে।’ এ সময় তিনি চলমান রাজনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় থেকেই তা কার্যকর করার দাবি জানান।
জুলাইয়ের নামে অপকর্ম করলে কঠোর ব্যবস্থার আহ্বান: জুলাইয়ের নামে কেউ যদি অপকর্ম করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বৈষম্যবিরোধী বা জুলাইয়ের নাম বিক্রি করে, ব্যবহার করে কেউ যদি অসাধু কাজ ও অপকর্মের চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দলীয়ভাবেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি ব্যবস্থা নেয় আশা করা যায়, এটা আর হবে না। যারা অসাধু কাজ করছে, তাদের কঠোরতম বিচার হওয়া উচিত। শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
জুলাইয়ের (জুলাই গণঅভ্যুত্থান) নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বৈষম্যবিরোধী নয়, রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীরাও যে পরিমাণ চাঁদাবাজিতে যুক্ত হয়েছে, সেটাতেও কঠোর হতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশ থেকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিলোপ ঘটাতে হবে। এটাই কিন্তু আমাদের সবারই আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, সামান্তা শারমিন এবং সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদসহ অন্য নেতারা।
পিএ/টিকে