সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ জিনিসটা আমি ঠিক বুঝি না। তবে ‘নতুন সংবিধান’ বলতে কিছুটা বুঝি। নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটা কমিশন গঠিত হয়েছে, তারা কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—নতুন সংবিধান মানে কী? আগের সংবিধান পুরোপুরি বাদ দিলে তবেই তো একে ‘নতুন’ বলা যাবে।
আর যদি আগের সংবিধানের কিছু অংশ রেখে দেন তাহলে সেটা তো ‘সংশোধিত সংবিধান’ হবে, নতুন নয়। আমি আসলে সংশোধিত সংবিধানের পক্ষে এ নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’—এই কথাটার মানে আমি বুঝি না। উনারা মেধাবী মানুষ, নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন কিন্তু আমি তো একেবারে সাধারণ মানুষ—এটা আমার বোধগম্য নয়।
সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনে টক শো অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মাসুদ কামাল বলেন, ‘বিচারব্যবস্থার ওপর কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। একটা পুরনো প্রবাদ আছে—গ্রামে কেউ যদি নিজেকে ধার্মিক বলে তাহলে সেটা কেবল কথায় না, আচরণে বোঝা যায়। তার জীবনযাপন, তার ব্যবহার থেকেই মানুষ বোঝে সে সত্যিকারের ধার্মিক কি না।
ঠিক তেমনি যদি এনসিপি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের কথা বলে তাহলে তাদের নিজেদের আচরণেই সেটা আগে প্রতিফলিত হওয়া দরকার। কিন্তু আমরা কি সেই ন্যায়ভিত্তিক আচরণের বাস্তব প্রতিফলন এনসিপির মধ্যে দেখতে পাচ্ছি? আমি অন্তত এখনো তা দেখি না। তাই আমার প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—যারা নিজেরাই এর চর্চা করছে না তারা কিভাবে সেটা কায়েম করবে?’
এনসিপির দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমন করতে হবে—এটা খুব সহজ কথা কিন্তু বাস্তবে কি সেটা হচ্ছে? গত তিন মাসে যেসব দুর্নীতির খবর মিডিয়ায় এসেছে তার বেশির ভাগই এসেছে বিএনপি বা এনসিপি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এনসিপির নামেই প্রতিদিন দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে।
কেউ কার কাছ থেকে কত টাকা চেক নিয়েছে, কোথা থেকে টাকা এসেছে—এসব নিয়েই সংবাদ হচ্ছে।
তারপর নারীর অধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু গত কয়েক মাসে যত রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে নারীদের অপমান, হয়রানি বা হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে, তার প্রায় সবটাই এসেছে এনসিপির লোকজনের বিরুদ্ধে। তাহলে প্রশ্ন হলো, এসবের চিকিৎসা কী? সমাধান কোথায়।’
মাসুদ কামাল বলেন, ‘২৪ দফা আমার কাছে খারাপ না বরং ভালোই লেগেছে। এই ইশতেহারটা আসলে তাদের আরো আগেই দেওয়া উচিত ছিল। সাধারণত বাংলাদেশে ইশতেহার নির্বাচনকেন্দ্রিক হয় এবং তখন একে নির্বাচনী ইশতেহার বলা হয়। তবে তারা যখন প্রথম দল গঠন করল তখন কোনো গঠনতন্ত্র ঘোষণা করেনি। অথচ একটা রাজনৈতিক দল গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতেই চলা উচিত।
সম্ভবত অভিজ্ঞতার অভাব কিংবা কম বয়স হওয়ার কারণে তারা জানত না শুরুতে কী করতে হয়। এর মাঝেই তারা নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। তবে এখন যখন তারা ইশতেহার দিয়েছে, আমি এতে অসন্তুষ্ট না—বরং বলা যায়, খুশি। কারণ, এই ২৪ দফাকে আলাদা করে উল্লেখ করা এবং সবগুলোকে একত্র করে উপস্থাপন করাটাও একটি বড় পরিশ্রমের কাজ। এই প্রক্রিয়ায় তারা দলীয়ভাবে আলোচনা করেছে, মতবিনিময় করেছে—এটাও ইতিবাচক। কোনো কিছু নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন সেটি ধীরে ধীরে একটা রূপ নেয়। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যেও কিছু পরিবর্তন আসবে—এটা স্বাভাবিক।’
ইউটি/টিএ