শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আর কখনো দলীয় সন্ত্রাসের হাতে জিম্মি হবে না:প্রধান উপদেষ্টা

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর কখনই রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘাঁটি হবে না, এমনকি কোনো শিক্ষার্থী আর টর্চার সেলে নির্যাতিত হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণ শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমাদের বাবা-মা ও শিক্ষকরা। আমরা সেই উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে এবার তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমাদের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে বহু কষ্টে বড় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। কিন্তু লেখাপড়া শেষ করে অনেক ছাত্র অসুস্থ হয়ে বের হয়—হলের নোংরা পরিবেশ,

নিম্নমানের খাবার, আর দলীয় সন্ত্রাসীদের দমন-পীড়নের কারণে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের জোর করে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হতো। প্রশাসন ও শিক্ষকরা জানতেন, কিন্তু থামানোর চেষ্টা করেননি। কারণ, শিক্ষকদের বড় একটি অংশ দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে প্রমোশন ও সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছিলেন।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে দলীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ আর অমানবিক নির্যাতন চলত। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছিল টর্চার সেল। এসব বন্ধে আমাদের সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আর কখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন রাজনীতির দ্বারা কলুষিত হতে দেব না, যা পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করে, তরুণদের জীবন ধ্বংস করে। বাবা-মায়েদের যেন সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়ে আর কখনো শঙ্কায় থাকতে না হয়।”

ধারাবাহিক সংস্কার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য ধারাবাহিকভাবে পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

বিদ্যালয় শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, “বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব প্রধান শিক্ষকের বেতনের গ্রেড এক ধাপ বাড়িয়ে দশম গ্রেড করা হয়েছে। এটা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শূন্য পদে সাড়ে ছয় হাজার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।”

পড়াশোনার পদ্ধতিগত পরিবর্তনের দিকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “প্রাথমিকের পড়াশোনার পদ্ধতিগত পরিবর্তন আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সব স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগ ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্তত ১০০টি স্কুলে এ বছরের মধ্যেই ই-লার্নিং চালু হবে। ঢাকার অভিজ্ঞ শিক্ষকরা প্রযুক্তির সহায়তায় এসব স্কুলে ক্লাস নেবেন। ফলে শিক্ষক সংকট অনেকটাই পূরণ হবে।”

প্রযুক্তি ও বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান নিয়ে বলেন, “যেসব এলাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে সেখানে সোলার প্যানেল বসানো হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্ক ও স্টারলিংক পরিষেবা ব্যবহার করে এই সংকট মোকাবিলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “স্কুলগুলোতে মেয়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্কুল অবকাঠামো নারীবান্ধব করার জন্য নির্মাণ কমিটিতে নারী স্থপতি রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্কুল ভবনের ডিজাইন থেকে শুরু করে পড়াশোনার পরিবেশ, চিন্তাভাবনায় মেয়েদের জন্য বিষয়ভিত্তিক গুরুত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে—যাতে তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের দিক থেকে স্বস্তিদায়ক পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারে।”

সবশেষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “শিক্ষা শুধু বই মুখস্থ করার বিষয় নয়। এটা একটি জীবনমুখী প্রক্রিয়া। একটি শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে, তা নির্ধারণ করে একটি জাতির ভবিষ্যৎ। আমরা সেই ভবিষ্যৎ রচনা করতে চাই, যেখানে কোনো সন্তান আর টর্চার সেলে নির্যাতিত হবে না, কোনো শিক্ষক দলীয় দাসত্বে আবদ্ধ থাকবে না, কোনো মা বাবাকে শঙ্কায় থাকতে হবে না।”

এফপি/ টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঢাবিতে ভাসমান কিছু থাকবে না, এটা মেনে নেওয়া যাবে না : জাহেদ উর রহমান Nov 05, 2025
img
প্রথম প্রেমের বিষয়টাই খুব মধুর এবং সুন্দর: কমলিকা ব্যানার্জি Nov 05, 2025
img
দায়িত্ব পাওয়ার ৩ ঘণ্টার পরই ‎পদত্যাগ করলেন ব্রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার Nov 05, 2025
img
সর্বমিত্রের মাস্তানি আসলে শিবিরের মাস্তানি : জাহেদ উর রহমান Nov 05, 2025
img
সব অভিমান ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করবো: বিএনপি প্রার্থী Nov 05, 2025
img
গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারালেন এরশাদ উল্লাহ'র সহযোগী সরোয়ার বাবলা Nov 05, 2025
img
খুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরিদর্শনে জয়া আহসান ও ইউএনডিপির শুভেচ্ছা দূত Nov 05, 2025
img
দেশজুড়ে এক মাসে ১৮ জেলায় কনসার্ট অ্যাশেজের Nov 05, 2025
img
সুনীল ছেত্রীকে ছাড়াই বাংলাদেশে খেলতে আসছে ভারত Nov 05, 2025
img
মামদানিকে শুভেচ্ছা জানালেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান Nov 05, 2025
img
প্রতিবাদী ও বুদ্ধিজীবী আলোচনা বিনোদনের আড়ালে: কৌশিক সেন Nov 05, 2025
img
দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে টেস্ট দলে জায়গা পেলেন পান্ত Nov 05, 2025
img
লামিনে ইয়ামাল রিয়ালে মাদ্রিদে খেলার অযোগ্য: ইভান জামোরানো Nov 05, 2025
img
সর্ব মিত্রকে ট্রায়ালে ফেলবেন না : জুমা Nov 05, 2025
img
জাতীয় সংসদের অর্ধেক আসনের দাবি নারী নেত্রীদের Nov 05, 2025
img
জনসমর্থনে শীর্ষ ১০ এর ভিতর না থাকলে রাজনীতি ছাড়বেন তারেক রহমান Nov 05, 2025
img
বার্সেলোনার দায়িত্ব ছাড়ছেন কোচ হান্সি ফ্লিক! Nov 05, 2025
img
কিছুক্ষণ পরই আকাশে দেখা দেবে ‘সুপারমুন’ Nov 05, 2025
img
রিমান্ডে সেই বুয়েট ছাত্র শ্রীশান্ত Nov 05, 2025
img
সার্ভার ত্রুটির কারণে নভেম্বরের এমপিও আবেদনের সময়সীমা বাড়াল মাউশি Nov 05, 2025