সাবেক সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ তার কাছে রয়েছে।’ শুক্রবার এক সেমিনারে তিনি এ অভিযোগ করেন। তবে তিনি কোনো উপদেষ্টার নাম উল্লেখ করেননি।
শনিবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণী ভিডিও পোস্ট করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল।
ওই ভিডিওতে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ৮ উপদেষ্টার মধ্যে ড. ইউনূসের নাম রয়েছে কি না—এই প্রশ্নের সমাধান করতে তিনি অভিযোগটির তদন্ত করতে সরকার ও দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
মাসুদ কামাল ওই ভিডিওতে বলেছেন, “সাবেক সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে গুরুত্বর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ তার কাছে রয়েছে।’ গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এক সেমিনারে এ অভিযোগ করেন তিনি।”
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক বিশ্লেষণে মাসুদ কামাল বলেন, “এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেছেন, ‘আমি খুবই হতাশ। আমলাদের চরিত্র না হয় খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিতে পারব। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আট উপদেষ্টার দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে।
কিন্তু কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি যখন এ কথাটি বলেছেন তখন উপস্থিত অন্য কর্মকর্তারা ঠিক ঠিক বলে হাততালি দিয়েছেন। উপদেষ্টারা যেসব দুর্নীতি করেছেন তার সবই তো এই কর্মকর্তাদের হাত দিয়েই হয়েছে। কাজেই তারা তার বক্তব্যকে সমর্থন দিয়েছেন।”
মাসুদ কামাল বলেন, ‘আমি মনে করি, এ বি এম আব্দুস সাত্তারের বক্তব্য সত্য।
আবার আমি মনে করি না যে এ বি এম আব্দুস সাত্তার দুধে ধোয়া তুলসী পাতা। কারণ অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তিনি কিভাবে হয়েছেন সেই নিয়েও বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে। তিনি যা-ই হোন না কেন, যদি তার কাছে তথ্য-প্রমাণ থাকে এবং উপস্থিত কর্মকর্তারা যদি হাততালি দিয়ে তাকে সমর্থন দেন; আমি ধরে নেব অভিযোগটি ঠিক এবং তার কাছে তথ্য-প্রমাণ আছে। তার কাছে প্রমাণ রয়েছে উপদেষ্টাদের দুর্নীতির, যাদের ওপর আমরা দেশের দায়িত্ব দিয়েছি। এটা ভাবতেই তো গা শিহরে উঠে! এটা কিভাবে সম্ভব?’
তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, উপদেষ্টা পরিষদে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে দু-একজন বাদে অধিকাংশ লোককেই যোগ্য মনে করি না। আবার পাশাপাশি এটাও বলতাম যে, সম্ভবত লোকগুলো সৎ। এখন দেখা গেল আমি ভুল জানি। আমি দু-একজনের দুর্নীতির কথা বলতাম। কিন্তু তিনি গুনে গুনে আটজনের কথা বললেন। এই আটজন যদি দায়িত্ব পালন করে যান, তাহলে কি তাদের আরো দুর্নীতি করার সুযোগ দেব। তিনি তো আটজনের কারো নাম বলেননি, আমরা তো এখন সবার দিকেই সন্দেহের চোখে তাকাব। আমি মনে করি, দুদকের উচিত হবে এ বি এম আব্দুস সাত্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তার কাছ থেকে অভিযুক্ত আট উপদেষ্টার নাম জানা। এর আলোকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ড. ইউনূসেরও উচিত এ বি এম আব্দুস সাত্তারকে জিজ্ঞাসা করা। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু যদি দুদক বা ড. ইউনূস তথ্য না চান তাহলে এই দুর্নীতির দায় তাদের নিতে হবে। আমি জানি না, এই আটজনের মধ্যে ড. ইউনূসের নাম আছে কি না। যতক্ষণ পর্যন্ত এই আটজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এখন সব উপদেষ্টাকে ওই আটজনের মধ্যে মনে করব। জনগণও হয়তো এটা মনে করবে। বিষয়টি এখন সরকারের কোর্টে।’
মাসুদ কামাল বলেন, ‘উপদেষ্টারা কিন্তু জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসেননি। তাদের ভালো মনে করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তির কাছে ৮ উপদেষ্টার দুর্নীতির তথ্য থাকার বিষয়টিকে ঘিরে আমরা আতঙ্কিত। আমরা এটার কড়া সুবিচার চাই। এই সুবিচার কি দুদক বা সরকার করবে? নাকি দুদক সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হবে।’
তিনি বলেন, “এ বি এম আব্দুস সাত্তার বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কষ্ট লাগে একজন উপদেষ্টার এপিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা পাওয়া গেলেও তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’ তিনি আরো প্রশ্ন করেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো একটি মন্ত্রণালয় নূরজাহান বেগম চালাতে পারেন?’ ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় একজন অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা দিয়ে চালানো ঠিক হচ্ছে?’ এই প্রশ্নগুলো আমি শুরু থেকেই করে আসছি। এই অভিযোগগুলো কি ড. ইউনূস স্পর্শ করতে পারেন? যদি তিনি এগুলোর বিষয়ে অ্যাকশনে যেতে পারেন তাহলে প্রমাণিত হবে তার যোগ্যতা আছে। নতুবা, তিনি মেরুদণ্ডহীন ও অযোগ্য প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ইতিহাসের কাছে বিবেচিত হবেন।”
এফপি/টিএ