বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এখন যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ হচ্ছে, তার ৯৯ শতাংশই বিএনপি উপস্থাপন করেছে। আজ থেকে আড়াই বছর আগে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) জাতীয় কাউন্সিল ২০২৫-এ তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে বিএনপি জাতির সামনে যা উপস্থাপন করেছিল, সেই কথাগুলোই বিভিন্নভাবে আজ সরকার গঠিত সংস্কার কমিশন আলাপ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। সেদিন কেউ নয়, বিএনপি এবং বিএনপির সঙ্গে যে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছিল, যাদের নিয়ে বিএনপি রাজপথে আন্দোলনে ছিল, যাদের নিয়ে স্বৈরাচারকে হটানো, জনগণের বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার একটি পরিবেশ তৈরিতে বিএনপি চেষ্টা করেছে, সেই রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি ৩১ দফা বা রিফর্ম দিয়েছিল জাতির সামনে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী চিকিৎসকসমাজের যত সদস্য আছেন, সবার কাছে আমার একটি চাওয়া। স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপারে আমরা ৩১ দফায় যা বলেছি, জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে সেটাকে বাস্তবায়ন করতে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ’ তারেক রহমান বলেন, ‘একটি কথা প্রচলিত আছে, রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের কথা বলে; কিন্তু নিজেদের ভেতরেই তা প্র্যাকটিস করে না। তাহলে তারা কেমন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে? কথাটি ঠিক-বেঠিক দুটির মাঝামাঝি। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও অনেক কিছুর কারণে হয়তো সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সেই প্রক্রিয়া এখনো চালু হয়ে ওঠেনি। তবে আমি মনে করি, আজ ড্যাবের কাউন্সিলটি ওই কথার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ঠিক নয়।
যাঁরা এই কথাটি তোলেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই; আজকের এই দিনটি তাঁদের সামনে এটিই প্রমাণ করে যে তাঁদের বক্তব্যটি সম্পূর্ণভাবে সঠিক নয়। শুধু তা-ই নয়, আগামী দুই দিন পর পর দুটি জেলার বিএনপির কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করব। এখানে কাউন্সিলররা যেভাবে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে, একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ড্যাবকে গঠন করবেন, ঠিক সেই জেলায়ও প্রান্তিক কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটি গঠন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাকশাল থেকে এই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছেন। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় নিয়ে এসেছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, আমাদের নেতারা যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেটার ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। গণতন্ত্রের ভিতকে ধীরে ধীরে মজবুত করে গড়ে তুলতে হবে। সেটি স্থানীয় সরকার পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা বিএনপির কাছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিজের মনের মধ্যে অন্তত একটি বিশ্বাস, জুলাই-আগস্টে দেড় হাজার এবং গত ১৫ বছরে কয়েক হাজার মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে, লাখের কাছাকাছি মানুষ আহত হয়েছে, এই মানুষগুলোর প্রত্যাশা আমরা সবাই মিলে যদি পূরণ করতে সক্ষম হই, তাহলেই আমরা আমাদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। এখানে উপস্থিত চিকিৎসকসমাজ, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষকে একটু করে হলেও কন্ট্রিবিউট করতে হবে। তাহলে আমরা সেটা পারব।’
অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সমগ্র বাংলাদেশ কিন্তু একটি পরিবর্তন প্রত্যাশা করছে। প্রত্যেকটি মানুষ, যেকোনো সমাজের যেকোনো মানুষ একটি পরিবর্তন চাচ্ছে। একটি ভালো পরিবর্তন চাইছে। গত বছর আগস্টের ৫ তারিখ, মাত্র এক বছর হয়েছে। এক বছর আগে বহুপ্রত্যাশিত একটি পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষ হঠাৎ করে বুক ভরে শ্বাস নিতে পেরেছে। সমগ্র জাতি, বাংলাদেশের সমগ্র মানুষ এই যে শ্বাস নিতে পেরেছে, তার পরে মানুষ কী চায়? মানুষ চায়, সামনের দিনগুলো যাতে ভালো হয়। হ্যাঁ, বাস্তবতা হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে, মুহূর্তের মধ্যে কোনো কিছু ভালো হবে না। কিন্তু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, চেষ্টা করতে হবে।’
একই অনুষ্ঠানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ডা. ফরিদ আমাকে বলছিলেন, উনি যে বিষয়টার ওপর এখানে বিশেষজ্ঞ, বিলাত থেকে এসে এখানে তিনি ক্যান্সারের ওপর কাজ করতে চান। সেই কাজগুলো করতে পারছেন না। আপনারা অত্যন্ত মেধাবী চিকিৎসক, এখানে একটা সেন্টার গড়ে তুলতে চান, যেটা হবে ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারছি না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় শুধু নন, আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা, ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি, ভবিষ্যতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যুক্ত আছেন। তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, এই নেতা আমাদের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দৃষ্টিতে এটা আনতে চাই। তাঁর স্ত্রীও (জুবাইদা রহমান) একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। এই বিষয়টার দিকে তিনি অত্যন্ত বেশি গুরুত্ব দেবেন। কারণ ১৮ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, এটা বড় বিশাল একটা দায়িত্ব।’
ওষুধনীতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওষুধনীতি, বিশেষ করে যাঁরা ওষুধ তৈরি করেন, তাঁরা দুই দিন আগে আমার কাছে এসেছিলেন, তাঁরা এখন কঠিন সংকটে। বর্তমান সরকারের যিনি সহকারী উপদেষ্টা আছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের, তিনি এমন কতগুলো ব্যবস্থা বা আইন দিচ্ছেন, যাতে ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই বিষয়গুলো কিন্তু আমাদের অ্যাড্রেস করতে হবে।’ ড্যাবের কাউন্সিলে ভোটারের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। এই নির্বাচনে ‘আজিজ-শাকুর’ ও ‘হারুন-শাকিল’ এই দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
ড্যাবের কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহর সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক লুত্ফুর রহমানের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড্যাবের দুই সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক হারুন আল রশীদ। অনুষ্ঠানে ডিজিটাল স্যুভেনির উপস্থাপন করেন ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন।
ইউটি/টিএ