বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, এদেশের মানুষ ভোট দেওয়া একেবারে ভুলেই গেছে। অনেকে বলে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন। অর্থাৎ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন। এদেশের মানুষ গত ৯০ বছর ধরে এলাকার মানুষের জন্য যিনি আপদে-বিপদে যাকে পায়, যিনি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে নিবেদিত প্রাণ, যিনি সুখে-দুঃখে মানুষের সঙ্গে থাকেন এ ধরনের একজন ব্যক্তিকে মানুষ ভোট দিয়ে বেছে নেয়। এই সিস্টেমই তো বর্তমানে রয়েছে। বিএনপি যারা করে তারা তো এই সিস্টেমই চাই।
পিআর সিস্টেমে নির্বাচন দাবি করা দলগুলোর উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তারা মনে করে যে আগামী দিনে আমরা তো ক্ষমতায় যেতে পারব না, বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। সুতরাং বিএনপি যাতে ক্ষমতায় না যেতে পারে এবং তারা যাতে ক্ষমতার ছিটে-ফোঁটা পেতে পারে এ জন্য পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায়।
শনিবার (৯ আগস্ট) বেলা ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের জনগণ পিআর সিস্টেম বোঝে না। তারা একজন ব্যক্তিকে দেখতে চায় তাদের প্রতিনিধি হিসেবে। এই সিস্টেম জনগণ চায় না। বর্তমান পদ্ধতিতেই আমরা নির্বাচন চাই। জনগণ সরাসরি ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারবে না বলে নানা কল্পকাহিনী সৃষ্টি করে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচনে হয়তো জনগণ আপনাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে পারে, কিন্তু আওয়ামী লীগ যা করেছে বিএনপি কর্মীরাও তাই করবে মনে করলে ভুল হবে। আওয়ামী লীগ ১৫ বছর টিকেছে, আমরা ১৫দিনও টিকবো না। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। জনগণকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে কাজ করতে হবে। প্রতিটি নেতাকর্মীকে শহীদ জিয়ার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা-নিষ্ঠার সাথে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে, তারা বীরের জাতি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, আওয়ামী লীগ কখনো চিন্তা করেনি। একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা ভয়াবহ গণহত্যার মাধ্যমে এদেশকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। এই সময় কোনো রাজনৈতিককে পাওয়া যায়নি। তখন চট্টগ্রামে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে এদেশের স্বাধীনতা এনেছেন। কিন্তু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অন্ধকারে রয়ে গেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু যুদ্ধের পর শেখ মুজিব যেমন বাকশাল প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা করেছিলেন, ঠিক তেমনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকেও ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি গর্ব করে বলতে পারি, বিএনপি ও আমাদের হাজারো নেতাকর্মী একাত্তরের মতো ২০২৪ সালেও বুক পেতে দিয়েছেন। যাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা মুক্ত।
স্মৃতিচারণ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা দেখেছি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন লুঙ্গি ও গামছা পরা খেটে খাওয়া সাধারণ বাঙালি। কিন্তু স্বাধীনতার পর দেখা গেল, বড়লোকের ছেলেরা মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই সনদে পাকিস্তান গঠনের কথা নেই বলে অভিযোগ তুলছে। অথচ এই জামায়াতই তখন পাকিস্তান রাষ্ট্র চায়নি।
শেখ হাসিনার সমালোচনা করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেনি। গণতন্ত্রকে তারা ছুড়ে ফেলে দিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা দলের খুলনা মহানগরীর সভাপতি শেখ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন প্রমুখ।