ভুল বুঝে, ভুল পরিচালনায় মানুষকে ভোগান্তি দিয়ে কিছু করবেন না : স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর বলেছেন, আমরা সহনীয় থাকার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যদি মনে হয় এটা (আন্দোলন) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, জনভোগান্তি তৈরি করছে তাহলে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আমরা আশা করি।

তিনি বলেন, ভুল বুঝে, ভুল পরিচালনায় মানুষকে ভোগান্তি দিয়ে কিছু করবেন না। আমরা তো জানি হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন, লোকবল সংকট দূরিকরণ ও দুর্নীতি দমন করতে হবে। আমরা এসব নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মন্ত্রাণলয়ের পক্ষ থেকে এসেছি। আপনাদের চাওয়া-পাওয়া এবং আমাদের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই, কোনো দূরত্ব নেই। কেউ যদি দূরত্ব সৃষ্টি করতে চান তাহলে আমাদের ভেবে দেখতে হবে আসলে আপনারা কি চান?

মহাপরিচালক বলেন, স্বাস্থ্য কমিশনের সুপারিশ কি কি সেটা না জেনে আন্দোলনে নেমে গেলে হবে না। আগে সুপারিশমালা পড়ে দেখতে হবে। এগুলো না জেনে আন্দোলনে থাকলে ভেবে দেখতে হবে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা? কোনো জিনিসের প্রতি ভালো ধারণা না রেখে সে জিনিস নিয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না। আমরা ঘুমিয়ে নেই।

স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন থামাতে বুধবার (১৩ আগস্ট) বরিশাল সফরে এসে এসব কথা বলেন তিনি।

ডা. আবু জাফর বলেন, দাবি নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই—আপনাদের চাওয়া-পাওয়া এবং আমাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। আমরা একশবার আপনাদের সঙ্গে ঐক্যমত পোষণ করি। আমরা আশা করছি সেই উদ্দেশে আমাদের কার্যক্রম মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর নিরলসভাবে করে যাচ্ছে। আপনারা বলেছেন, সংস্কার কমিশনের সুরপারিশমালা রিভিউ করতে হবে। এটা তো আরও সময়ের বিষয়—তিন চার মাসে এটি সম্ভব না।

তিনি বলেন, আপনাদের পক্ষে যদি কোনো সুপারিশ থাকে, আপনারা যদি বিষয়টেকে বিশ্লেষণ করে যদি মনে করেন এর মধ্যে আরও কিছু সংযুক্ত করা দরকার আমরা সানন্দে সেগুলো গ্রহণ করবো। প্রকৃতিপক্ষে যদি বাস্তবায়নযোগ্য হয় সেই উদ্যোগ আমরা নেবো অথবা এই সুপারিশমালাকে পরবর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করে যাবো।

এর আগে, সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন মহাপরিচালক। তিনি রোগী, স্বজন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেলা ১টার দিকে হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর উদ্দেশে বরিশালের সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংবাদিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। মতবিনিময় শেষে সেবাগ্রহীতাদের নিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কথা বলেন এবং জুস খাইয়ে অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। তবে আন্দোলনকারীরা অনশন ভাঙেননি।

এ সময়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আহসান হাবিব, শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মশিউল মুনির, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল, বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. এস.এম. মনজুর-এ-এলাহী, জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

অনশনকারী শিক্ষার্থী শাফিন মাহমুদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। আন্দোলনটি আমাদের জন্য না, দেশবাসীর জন্য। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যতক্ষণ না আসবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে পিছু হটবো না।

আন্দোলন সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন রনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে আমাদের কোনো প্রতিনিধির বৈঠক হয়নি, তার সঙ্গে আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনো কথা হয়নি। তবে তিনি অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা না আসা পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন। আমাদের এত সুশৃঙ্খল আন্দোলনের মধ্য দিয়েও কারও টনক নড়াতে পারিনি, তাই শিক্ষার্থীদের সাহসিকতা দেখে আমরাও গণঅনশনে যাচ্ছি। একইসঙ্গে ব্লকেড কর্মসূচিও চলবে।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারে তিনদফা দাবি আদায়ে ১৭ দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে আজকেও নথুল্লাবাদ ও রূপাতলীতে মহাসড়ক অবরোধ করেন।

ইউটি/এসএন



Share this news on:

সর্বশেষ

img
গ্লোবাল প্লাস্টিকস চুক্তির খসড়া প্রত্যাখ্যান করল বাংলাদেশ Aug 14, 2025
img
‘পরম সুন্দরী’ ট্রেলারে রঙ আর সুরের মেলবন্ধনে মুগ্ধ দর্শকরা Aug 14, 2025
img
প্রথমবারের মত ফুটবলের মাঠে নামল এআই-চালিত মানবাকৃতির রোবট দল Aug 14, 2025
img
একজন উপদেষ্টাকে রাত ৪টায় বের হতে হয় চাঁদাবাজিতে : মঞ্জুরুল আলম পান্না Aug 14, 2025
img
দেশের ৭ জেলায় সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড় বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা Aug 14, 2025
img
পিএসজি-টটেনহাম ম্যাচে উয়েফার নেতানিয়াহুর বিরোধী বার্তা Aug 14, 2025
img
শুভশ্রীকে পাশে নিয়ে প্রেমিকা রুক্মিণীর নামে পুজা দিলেন দেব! Aug 14, 2025
img
৩৩ বছর বয়সে সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতলেন কিউই পেসার Aug 14, 2025
img
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না করার পায়তারা চলছে, শিগগিরই টের পাবেন— মাসুদ কামাল Aug 14, 2025
img
এজেন্সি মালিক ৩ হাজার বিড়ি নিয়ে সৌদি যান, স্বর্ণ আনার সময় ধরা খান: ধর্ম উপদেষ্টা Aug 14, 2025
img
আবারও গ্রেফতার প্রিন্স মামুন Aug 14, 2025
img
‘আন্ধার’-এ সিয়ামের নায়িকা হচ্ছেন তুষি Aug 14, 2025
img
পাকিস্তানে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে ফাঁকা গুলি, বহু হতাহত Aug 14, 2025
img
ফেসবুকে খাবারের ছবি তারাই দেয়, যারা অনেকদিন পরে ভালো খায়: কুদ্দুস বয়াতি Aug 14, 2025
img
করদাতাদের ব্যাপক সাড়া, ১০ দিনেই ই-রিটার্ন দিয়েছেন ৯৬৯৪৫ জন Aug 14, 2025
img
সাদা পাথর লুটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিট শুনবেন হাইকোর্ট Aug 14, 2025
img
ইলন মাস্কের এক্স এআই ছাড়লেন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইগর বাবুশকিন Aug 14, 2025
img
লখনউ সুপার জায়ান্টস থেকে বিদায়ের পথে জহির খান Aug 14, 2025
img
চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডে তাওহীদ হৃদয় Aug 14, 2025
img
শৈশবের ভয়ানক স্মৃতি প্রকাশ করলেন গৌতমী কাপুর Aug 14, 2025