পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই : বিচারপতি আব্দুর রহমান

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সাবেক বিচারক বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেছেন, আমাদের দেশের প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আগামীতে সকল নির্বাচনে জনমতের পুরোপুরি প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত ‘জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের আলোচনায় এসব কথা বলেন।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুর রবের সভাপতিত্বে ও পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূলত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএসপিএস-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. মো. মিজানুর রহমান।

বিচারপতি আব্দুর রহমান বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে– প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করা সম্ভব নয়। পুরোনো পদ্ধতি জনমতের পুরোপুরি প্রতিফলন ঘটে না। এমনকি গতানুগতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করাও সম্ভব নয়।

কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, প্রার্থীরা নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য পেশিশক্তি ও অবৈধ শক্তির প্রভাব প্রদর্শনের সুযোগ পান। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো এবং প্রার্থীরা মনোনয়ন বাণিজ্যে মেতে ওঠেন। অল্পের জন্য হেরে গেলে সেসব ভোটের মূল্যায়ন হয় না। ফলে ভোটারদের ভোটের যথাযথ মূল্যায়নের সুযোগ থাকে না। আর প্রচলিত পদ্ধতিতে ক্ষমতাসীনদের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ থাকে। তাই আগামী দিনে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হলে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। তিনি নতুন এ পদ্ধতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনের আহ্বান জানান।

সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লব আমাদের জাতীয় জীবনের বড় অর্জন। তাই এ ঐতিহাসিক অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে জুলাই বিপ্লবীদের অবশ্যই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করে জাতীয় বীর হিসাবে ঘোষণা করতে হবে। অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা এবং এটিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই সনদের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। মূলত, অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্যই জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া দরকার, অন্যথায় বর্তমান সরকারই অবৈধ হয়ে পড়বে।

তিনি সকল প্রকার ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে ওঠে ‘জুলাই চেতনা’ ধারণ করে আগামী দিনের করণীয় নির্ধারণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় ফ্যাসিবাদ নতুন করে মাথাচাঁরা দিতে পারে।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, জুলাই সনদকে অবশ্যই সাংবিধানিক ভিত্তি দিতে হবে। অন্যথায় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এ সনদকে শুধুই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। একইসঙ্গে নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও পেশিশক্তি মুক্তি করতে হলে পিআর পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। আর স্থানীয় সরকারকে সংসদ সদস্যদের প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। তাহলে চোর-বাটপাররা সহজে সংসদে যেতে চাইবে না।

তিনি জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচন অনুষ্ঠানে অধ্যাদেশ জারি অথবা গণভোট গ্রহণের আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে ড. প্রফেসর ড. আব্দুর রব বলেন, পিআর পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই রয়েছে। আর এ পদ্ধতি অধিকতর গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। তাই আগামীতে সকল নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক। তাই এ পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।

আরো আলোচনা রাখেন– শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রসেফর ড. ফিরোজ আহমেদ, মেজর (অব.) ড. মোহাম্মদ ইউনুস আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক প্রফেসর মুহাম্মাদ রুহুল আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আ. রহমান মূসা, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান কাবুল, লে. কর্ণেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক, বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির চেয়ারম্যান কর্ণেল (অব.) আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহ পিএসসি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম জিয়াউল হাসান, ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবিদ হাসান সিদ্দিক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোহাম্মাদ হাসান নাসির, সাবেক সচিব শেখ এ কে মোতাহার হোসেন ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাসুম প্রমুখ।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নরেন্দ্র মোদিকে পদত্যাগ করতে হতে পারে, জানালেন অমিত শাহ Aug 27, 2025
img
শ্বশুর হলেন বিচারক: সমালোচনায় ‘সংকীর্ণতা’ দেখছেন সারজিস Aug 27, 2025
img
শহীদ আবু সাঈদ একুশ শতাব্দীর প্রথম ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ : ফজলুর রহমান Aug 27, 2025
img
আমাদের আন্দোলন চলবে, যতদিন মানুষ ব্যালটে ভোট দিতে না পারে : শামা ওবায়েদ Aug 27, 2025
img
মোবাইলে জুয়ার অ্যাপ থাকলে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ১ কোটি টাকা জরিমানা Aug 27, 2025
img
আজকের পরে কারও কাছে পাথর পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা : সারওয়ার আলম Aug 27, 2025
img
বিটিআরসির নতুন কমিশনার আবদুর রহমান সরদার Aug 27, 2025
img
এখন হয় মনোনয়ন বাণিজ্য, পিআরে হবে এমপি বাণিজ্য : খোকন Aug 27, 2025
img
ভারত থেকে প্রচণ্ড বেগে আসছে পানি, হাজারো মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরাল পাকিস্তান Aug 27, 2025
img
সৌম্য-শান্তর ব্যাটে ঝড়, উড়ে গেল লিটনরা Aug 27, 2025
img
মিথিলার সুখবরে খুশি সৃজিত, তবে কি দূরত্ব ঘুচছে তাদের? Aug 26, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই : বিচারপতি আব্দুর রহমান Aug 26, 2025
img
গাইবান্ধায় কাভার্ডভ্যান চাপায় প্রাণ গেল ২ জনের Aug 26, 2025
img
এশিয়া কাপের দলে জায়গা হয়নি, ইংল্যান্ডে দুর্দান্ত ফর্মে পাকিস্তানি তারকা Aug 26, 2025
img
জিআই স্বীকৃতি পেল ফুলবাড়িয়ার লাল চিনি Aug 26, 2025
img
ব্রাজিলের মন্ত্রীর ভিসা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র Aug 26, 2025
img
হাসিনা চলে যাওয়ার পরে যে কাউকে গালাগাল করা যাচ্ছে : মাসুদ কামাল Aug 26, 2025
img
বরিশালের সাবেক মেয়র লোকমান গ্রেপ্তার Aug 26, 2025
img
শুল্ক জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ দেশের পার্সেল পাঠানো বন্ধ Aug 26, 2025
img
ধার শোধ না করায় এসপি থেকে অতিরিক্ত এসপি হলেন নিহার রঞ্জন Aug 26, 2025