শুধু অতীত নয়, বর্তমানের দুর্নীতিও থামাতে হবে : জ্বালানি উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আইন করা হয় দুর্নীতি থামানোর জন্য। কিন্তু এ দেশে আইন ও নীতি নির্ধারণের মাধ্যমেই দুর্নীতি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘নিরাপত্তা, দুর্নীতি ও জ্বালানি’ বিষয়ক সংলাপে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ফাওজুল কবির বলেন, জ্বালানি খাতে দুর্নীতির কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। খাতে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন টাকার বকেয়া ছিল, যার অনেকটাই পরিশোধ করা হয়েছে। প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তেল আমদানির জন্য আগে রিফাইনারি মালিক হতে হতো, সেটি বাতিল করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, রোজার সময় সাধারণত লোডশেডিং হয়। এবার কম হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় লোডশেডিং কমানো সম্ভব। আমরা এমন টেমপ্লেট তৈরি করছি, যাতে আগামী সরকারের পরিবর্তন আনতে সুবিধা হয়। এখন পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে না, যেখানে আগে অনেক দুর্নীতি হতো।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির নীতি প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমরা দুর্নীতির বিষয়ে সন্তুষ্ট নই। অনেকেই চান দুর্নীতি থাকুক, যাতে সুবিধা নিতে পারেন। শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামানোর দিকেও নজর দিতে হবে। এ দেশে উন্নয়নের জন্য নয়, বরং দুর্নীতির জন্য অনেক প্রকল্প করা হয়।

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এর জন্য দরকার কার্যকর গণতন্ত্র। আমাদের রাজনীতি ও নির্বাচন অঙ্গনকে পরিষ্কার করতে হবে। দুর্নীতির মূল চালিকা শক্তি হল টাকা। আমাদেরকে টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে ছিল তখন তারা সিকিউরিটির উপর গুরুত্ব বেশি দিয়েছিল। দুর্নীতি দমনে কোন গুরুত্ব দেয়নি। দুর্নীতিতে গুরুত্ব দেওয়াটা দরকার ছিল। 

তি‌নি ব‌লেন, আইন থাকা সত্ত্বেও গত তিনটি নির্বাচন ঠিক মত হয় নাই। রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত না করতে পারলে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সিকিউরিটির ৫ টি তাত্ত্বিক দিক আছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি ও সমাজ। সিকিউরিটি অফ দ্য পিপল নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। মানুষের নিরাপত্তা না থাকলে সেই রাষ্ট্র অর্থহীন। নতুন টেকনোলজি বা সাইবার সিকিউরিটি আমাদের নিরাপত্তার ধারণা পাল্টে দিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ।

মিডিয়া, ফেইক নিউজ, ফ্যাক্ট চেক এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ও আমাদের জন্য নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসেবে তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জ্বালানি আমাদের জন্য নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করছে।

তি‌নি ব‌লেন, আমাদেরকে কনভেনশোনাল চিন্তা-ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা এখনও সব বিষয়ে ঐক্যমত্য হতে পারি নাই। সব বিষয়ে ঐক্যমত্য হলে সেখানে সন্দেহ তৈরি হয়। তাই আমাদের ডাইভারসিটিকে জায়গা দিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে। অধৈর্য হওয়া যাবে না। আধুনিক যুগে আমরা প্রবেশ করেছি, আমাদের চিন্তা -ভাবনাও আধুনিক করতে হবে। ইনডেমনিটি আইন দ্বারা জ্বালানি খাতে দুর্নীতি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এলএনজি খাতে দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।   

মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, জুলাই বিপ্লবোত্তর অনেক কমিশন করা হলেও, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো কমিশন করা হয় নাই। জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো কৌশল নেই। পানি নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে। পানি নিয়ে যে সমস্যা আছে তা সমাধান না করা হলে আমরা সমস্যায় পড়ব। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এটি নিরাপত্তার হুমকি না, আমাদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আরও আলোচনা করতে হবে। সীমান্তে মানুষ হত্যা নিয়ে জোরাল কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় নাই বিগত ও বর্তমান সরকারের সময়ে। আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তায় অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে।

তি‌নি ব‌লেন, বাংলাদেশে মাদক পাচার বন্ধ করতে হবে। এর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ থেকে আমাদের দেশে স্মল আর্মস রুট তৈরি করা হচ্ছে। আমাদেরকে কৌশলগতভাবে এগোতে হবে যেন কোনো আন্তর্জাতিক ক্ষমতার যুদ্ধে না পড়ে যাই। আরাকান আর্মির উপস্থিতি বিবেচনা করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হবে। অসম সামরিক চুক্তি নিয়ে আমাদেরকে বিবেচনা করতে হবে। তথ্য যুদ্ধ মোকাবেলা করায় আমাদের ক্ষমতা খুবই কম। যুদ্ধে না গিয়েও প্রতিপক্ষকে পরাহত করা যায়, এটি নিয়ে আমাদের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য জাতীয় ইউনিটি গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নিরাপত্তা যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র গবেষণা ফেলো সাফকাত মুনির বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নিয়ে কোনো কমিশন গঠন করা হয় নাই।

জাতীয় নিরাপত্তাকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করতে হবে। প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা নিয়ে আমাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদেরকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্রাকচার তৈরি করতে হবে। আগামী নির্বাচিত সরকারের উচিত জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে টাস্ক ফোর্স তৈরি করা। সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে আমরা তেমন আলোচনা করি না। এটিকে সামগ্রিক জাতীয় নিরাপত্তার লেন্সে দেখতে হবে।

তি‌নি ব‌লেন, আগামী নির্বাচিত সরকারকে সাইবার সিকিউরিটির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। অপ্রথাগত নিরাপত্তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো চিত্র আমাদের কাছে নেই। আগামী নির্বাচিত সরকারকে -এর উপর নজর দিতে হবে। দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার আগে আমাদেরকে দেখতে হবে বেতন ভাতা বর্তমান সময়ে টিকে থাকার জন্য ঠিক আছে কিনা। প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের নিরাপত্তা কীভাবে সুসংহত করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।   

কেএন/টিকে


Share this news on:

সর্বশেষ

img

মির্জা ফখরুল

আলোচনা চলা অবস্থায় ইসলামি দলগুলোর কর্মসূচি ‘অহেতুক চাপ সৃষ্টি’ Sep 18, 2025
img
ভক্তদের চাপে লন্ডনে বাড়ল আরিয়ানার কনসার্ট Sep 18, 2025
img
আসন্ন দুর্গাপূজার পরিস্থিতি নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ মিথ্যা প্রচার করছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Sep 18, 2025
img
গানের শিক্ষক থাকবে, ধর্মীয় শিক্ষকও: দীপা খন্দকার Sep 18, 2025
img
বব ডিলানের শুরুর দিনগুলো ফিরছে নতুন বক্সসেটে Sep 18, 2025
img
ইংরেজিতে ভয়ের কারণে বিশ্বসুন্দরীর প্রতিযোগিতায় সুস্মিতার কাছে হারেন ঐশ্বরিয়া! Sep 18, 2025
img
তামিম বিসিবিতে আসলে মনের কথা বলতে পারবেন তাইজুল Sep 18, 2025
img
আলোচনার টেবিলে সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা দরকার : জোনায়েদ সাকি Sep 18, 2025
img
বাংলাদেশকে পথ দেখায় ঢাবি, ঢাবিকে পথ দেখায় সাংবাদিক সমিতি: ভিপি সাদিক কায়েম Sep 18, 2025
img
সেচ্ছাসেবক দলের বিল্লালসহ ২ জন রিমান্ডে Sep 18, 2025
img

জেরায় স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী

'আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলেননি শেখ হাসিনা' Sep 18, 2025
img

লাতিন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫

মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করেছে লাতিন রেকর্ডিং একাডেমি Sep 18, 2025
img
জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে: গোলাম পরওয়ার Sep 18, 2025
img
রাকসু-চাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Sep 18, 2025
img
শুধু অতীত নয়, বর্তমানের দুর্নীতিও থামাতে হবে : জ্বালানি উপদেষ্টা Sep 18, 2025
img
৫২ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা Sep 18, 2025
img
১১ বছর পর ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে স্পেন Sep 18, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ শুরু Sep 18, 2025
img
নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দিলেন মোদি Sep 18, 2025
img
করণের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন কাজল কন্যা, মা বললেন ‘সিদ্ধান্ত ওর’ Sep 18, 2025