আফ্রিকাকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্বে নিজের বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্বে ভাষণ দেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো। ছবি: সংগৃহীত
রুটো বলেন, এটা একটা চিরন্তন আবেদন। কারণ পরিষদের মাত্র পাঁচজন স্থায়ী সদস্য রয়েছে, যাদের সবগুলোই ইউরোপ, এশিয়া বা উত্তর আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করছে। তবুও প্যানেল আফ্রিকা বা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে কোনো দেশকে যুক্ত করা হয়নি।
একই দাবি তোলেন সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্টও। আফ্রিকাকে নিরাপত্তা পরিষদে আসন দেয়ার আহ্বান জানিয়ে জুলিয়াস মাদা বায়ো বলেন, ‘আফ্রিকা কোনো সমস্যা নয়। আফ্রিকা এমন একটি অংশীদার যার ক্ষমতায়ন করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৪০ কোটি মানুষের আবাসস্থল এবং জাতিসংঘের বৃহত্তম আঞ্চলিক ব্লক আফ্রিকার নিরাপত্তা পরিষদে কোনো স্থায়ী আসন নেই। এটি অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য। এতে নিরাপত্তা পরিষদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং এর সিদ্ধান্তের বৈধতা ক্ষুণ্ণ হয়।’
এদিন বেশ কয়েকজন নেতার কাছ থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের জোরালো বক্তব্য আসে। জাপানের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা তার ভাষণে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী কাঠামো বর্তমান বিশ্বের সংকট মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যর্থ হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক ভাষণে তিনি এই মন্তব্য করেন।
শিগেরু ইশিবা জোর দিয়ে বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা আপনাআপনি আসে না, বরং সক্রিয়ভাবে তা রক্ষা করতে হয়। তিনি উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদের ওপর আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব থাকলেও পাঁচ স্থায়ী সদস্যের ভেটো ক্ষমতা বারবার গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ, যেখানে নিরাপত্তা পরিষদের একজন স্থায়ী সদস্য তার প্রতিবেশীকে আক্রমণ করেছে। এটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভিত্তিকেই নাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো ভেটো প্রয়োগের কারণে গৃহীত হয় না এবং সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয় না।’
পরিষদে প্রতিনিধিত্ব ও বৈধতার ওপর গুরুত্বারোপ করে ইশিবা স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় ধরনের সদস্যপদ বাড়ানোর আহ্বান জানান। একটি প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, নতুন স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যেমন ১৫ বছরের জন্য, স্থগিত রাখা যেতে পারে, যাতে পরিষদ আরও কার্যকর ও ন্যায্যভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।
গাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ইশিবা ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান সামরিক অভিযান এবং এর ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকট ও দুর্ভিক্ষের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনকে ঘিরে পরিস্থিতি এমন এক গুরুতর ও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যা জাপান বরাবরই সমর্থন করে এসেছে। গাজা শহরে ইসরাইলের সাম্প্রতিক স্থল অভিযান সেখানকার ভয়াবহ মানবিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।’
জাপানি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জাপান এই পদক্ষেপগুলোর তীব্র নিন্দা জানায়, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা অবিলম্বে এসব বন্ধের আহ্বান জানাই। ইসরায়েলি সরকারি কর্মকর্তাদের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে দেয়া বক্তব্যে আমি তীব্র ক্ষোভ বোধ করছি।’
একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসকে সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের আহ্বান জানান এবং ফিলিস্তিনে জাপানের মানবিক সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।
এমকে/এসএন