আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে মালয়েশিয়ার পথে ট্রাম্প

৫ দিনের সফরের বাকি পর্বগুলোতে তার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর তার দেওয়া আগ্রাসী বাণিজ্য শুল্কে টালমাটাল এশিয়ায় ৫ দিনের সফরের প্রথম পর্বে মালয়েশিয়ায় নামতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
এবারের সফরের পরের পর্বগুলোতে তার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ারও কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

ট্রাম্পের সফর শুরুর আগেই শনিবার কুয়ালা লামপুরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের এক বৈঠক শুরু হয়েছে, যেখানে চীনা পণ্যে আরও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপে ট্রাম্পের হুমকি এবং দুর্লভ খনিজ ও ভৌত চুম্বক রপ্তানিতে চীনের কঠোর বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।

দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা অ্যাপেকের সম্মেলনের মাঝে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যকার বহুল আকাঙ্ক্ষিত বৈঠকের পথও প্রশস্ত করবে, যেখানে শুল্ক, প্রযুক্তিতে বিধিনিষেধ ও চীনের মার্কিন সয়া বিন কেনা সংক্রান্ত কিছু চুক্তি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

রোববার সকালে ট্রাম্পের মালয়েশিয়া নামার কথা। এশিয়ায় তার এ সফরই হতে যাচ্ছে জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে এখন পর্যন্ত তার দীর্ঘ সফর।

শুক্রবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন, শি’র সঙ্গে ‘ভালো বৈঠক’ হবে বলে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

“প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে আলাপ করতে হবে, তারও আমাদের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ আছে,” বলেছেন তিনি।

ট্রাম্প-শি বৈঠক

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে শি’র সঙ্গে যে বৈঠক করতে যাচ্ছেন, সেটি হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চীনের নেতার সঙ্গে তার প্রথম বৈঠক।

এ বৈঠকে কোনো ‍চুক্তি না হলে চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১ নভেম্বর থেকে মোট ১৫৫ শতাংশ করার হুমকি আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটন এমন কোনো পদক্ষেপ নিলে বেইজিংয়েরও পাল্টা শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা প্রবল। তেমন কিছু হলে বিশ্বের দুই শীর্ষ অর্থনীতির মধ্যে শুল্ক যুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে যে বিরতি চলছিল, তার অবসান ঘটবে।

বাণিজ্য ছাড়াও দুই নেতার মধ্যে বৈঠকে তাইওয়ান নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। কথা হবে রাশিয়া প্রসঙ্গেও, চীনের যে মিত্রের ওপর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তার নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত করেছে।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি হংকংয়ে কারাদণ্ড ভোগ করা গণতন্ত্রপন্থি নেতা জিমি লাইয়ের মুক্তির প্রসঙ্গও তুলতে পারেন। অ্যাপল ডেইলি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা লাই জাতীয় নিরাপত্তা আইনে সাজা খাটছেন।

“এটা আমার তালিকায় রয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছি, দেখা যাক কী হয়,” সাংবাদিকদের বলেছেন ট্রাম্প।

এদিকে অ্যাপেক সম্মেলনে ট্রাম্পের যোগ দেওয়ার আগে সিউলে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কয়েক হাজার দক্ষিণ কোরীয়। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছেন।

আসিয়ান সম্মেলন

‘বহুপাক্ষিক বিশ্বের’ ধারণায় নারাজ ট্রাম্প এর আগে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের আসিয়ান সম্মেলনে যোগ না দিলেও এবার দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে আসছেন।
মালয়েশিয়ায় এবারের সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা ও দক্ষিণ কোরিয়ার সিরিল রামাফোসাসহ আরও কিছু বিশ্বনেতার উপস্থিত হওয়ার কথা।

জুলাইয়ে মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সীমান্তযুদ্ধের অবসানের পর এবারের আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে।

রোববার ট্রাম্পের মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। তারা দু’জন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুষ্ঠানেও থাকতে পারেন।

এদিন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার সঙ্গেও ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লুলা ব্রাজিলের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছেন।

ট্রাম্পের মিত্র, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর অপরাধ নিয়ে বিচারের জেরে লাতিনের দেশটির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল ওয়াশিংটন।

দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে ‘মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের’ নামে মার্কিন সামরিক বাহিনীর অভিযান নিয়ে শুক্রবারও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লুলা। তিনি বলেছেন, মালয়েশিয়ায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হলে তিনি সেখানে এ বিষয়টিও তুলবেন।

তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের আদৌ বৈঠক হচ্ছে কিনা, হোয়াইট হাউস সেটি নিশ্চিত করেনি।

 আরপি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img

প্রশ্ন মাসুদ কামালের

তবে কি আওয়ামী লীগের ভয়েই এবার বিকলাঙ্গ ‘না ভোট’ Oct 26, 2025
img
শিক্ষক নিয়োগসহ ধর্মীয় মূল্যবোধ পরিপন্থি সব সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি Oct 26, 2025
img
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের নাগরিকত্ব বাতিল করল মাদাগাস্কার Oct 26, 2025
img
তারেক রহমানের ৩১ দফা জাতির ‘ম্যাগনাকার্টা’ : প্রিন্স Oct 26, 2025
img
আ.লীগ নেতাদের দলে জায়গা দিতে বিএনপি নেতার আহ্বান Oct 26, 2025
img
‘প্রভাব খাটাইনি, কাউকে একবারও ফোন করিনি’, ভাইয়ের নিয়োগ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব Oct 26, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ গেল ১ জনের Oct 26, 2025
img
কুমিল্লায় এলডিপি ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ২ Oct 26, 2025
img
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হলেন প্রেস সচিবের ভাই Oct 26, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে কুমিল্লায় জামায়াতের বিক্ষোভ Oct 26, 2025
img
‘ম্যায় হুঁ না’ খ্যাত অভিনেতা সতীশ শাহ আর নেই Oct 26, 2025
img
প্রক্টর অফিস ঘেরাওয়ের ঘোষণা সর্ব মিত্রের Oct 26, 2025
img
৩০০ ফিটে দৌড় প্রতিযোগিতার নামে ২২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে উধাও ‘উড়াও বাংলাদেশ’ Oct 26, 2025
img
বিএনপির নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসলেই সব ষড়যন্ত্র তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে : ডা. জাহিদ Oct 25, 2025
img
রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল বিএনপি নেতার Oct 25, 2025
img
বিএনপি ক্ষমতায় এলে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করা হবে : শরিফ উদ্দিন জুয়েল Oct 25, 2025
img
শেখ হাসিনা ইউনিক ফর্মুলায় বাকশাল কায়েম করেছিলেন: প্রেস সচিব Oct 25, 2025
img
পররাষ্ট্র ক্যাডার থেকে চাকরিচ্যুত হলেন ছাত্রলীগ নেতা Oct 25, 2025
img
তারেক রহমানের মধ্যে কোনো হিংসা নেই : রিজভী Oct 25, 2025
img
যে তিন দলের তোষণ করল সরকার, তারাই এখন অভিযোগ করছে : নুরুল হক নুর Oct 25, 2025