সাংবাদিক ও কলামিস্ট এম এ আজিজ বলেছেন, সংসদ ছাড়া কোনো সংস্কার পাস করা সম্ভব নয়। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। আপনি যতই ‘জুলাই সনদ’ বা আইনি আদেশের কথা বলেন না কেন, শেষ পর্যন্ত যেতে হবে সংসদেই। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এম এ আজিজ এসব কথা বলেন।
এম এ আজিজ বলেন, এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐকমত্য ও লিখিত চুক্তি থাকা দরকার ছিল। যাতে সবাই অঙ্গীকার করে যে, সংসদে গিয়েই তারা সংস্কার কার্যকর করবে। যেসব দলের সংসদে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাদেরই এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল। এম এ আজিজ আরো বলেন, বিএনপি শুরুতেই ২৭ দফা রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিল। পরবর্তীতে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সেটি ৩১ দফায় উন্নীত করা হয়। অর্থাৎ সংস্কার প্রস্তাবের সূচনা বিএনপির হাত ধরেই হয়েছে।
তিনি মনে করেন, এই প্রস্তাবগুলো নিয়েই পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ঐক্যমত্য গড়ে তোলা যেত। কিন্তু সরকার সে পথে না নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো সংসদীয় আলোচনায় বিষয়গুলো এনেছে।
এম এ আজিজ আরো বলেন, কোনো অধ্যাদেশ, প্রেসিডেন্ট বা প্রধান উপদেষ্টার আদেশ—এসব কিছুই টেকসই নয় কারণ শেষ পর্যন্ত সব কিছুই সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন। গণভোট বা সংস্কার—যা-ই হোক না কেন, শেষ কথা সংসদেই বলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এখনো পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, যা প্রক্রিয়াটিকে আরো অনিশ্চিত করেছে। শুরু থেকেই পুরো বিষয়টি বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমনভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যে, প্রতিটি বক্তব্যে ‘যদি-কিন্তু’ শব্দটা থেকেই যায়— সরল অবস্থান নেই কোথাও।’
এম এ আজিজ বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কখনোই স্পষ্টভাবে কথা বলেননি। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও প্রিয় ছাত্র নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না নিজেই বলেছেন, ‘ড. ইউনূস কথা শোনেন, কিন্তু উত্তর দেন না; প্রশ্ন করলে প্রতিক্রিয়া জানান না।’
এম এ আজিজের মতে, একজন সরকার প্রধানের উচিত যাদের ডাকা হচ্ছে, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া—কিন্তু তিনি তা করছেন না। তিনি আরো বলেন, ঐকমত্য কমিশন আট-নয় মাস ধরে কাজ করেছে এবং শেষে একটি খসড়া স্বাক্ষর করেছে। উপস্থিত ৩০ দলের মধ্যে ২৫টি দল স্বাক্ষর করলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দল নোট অব ডিসেন্ট (অসন্তোষসূচক মন্তব্য) জমা দিয়েছিল। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী চারটি, এনসিপি একটি এবং বাকিগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে ছিল।
এম এ আজিজ অভিযোগ করেন, সরকার বা কমিশন নোট অব ডিসেন্টগুলো গায়েব করে দিয়েছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আলোচনা ছিল—এই ভিন্নমতগুলো সংশ্লিষ্ট দলের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তারপর সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।’
তিনি মনে করেন, ঐকমত্য কমিশন নিজেই বিভ্রান্তি তৈরি করেছে, আর বিএনপি সেই কারণে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেনি। একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের জোট মাঠে আন্দোলনে নেমেছে। এই অবস্থায় দুই পক্ষ—জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট ও বিএনপি—দুই মেরুর মতো অবস্থানে চলে গেছে। তাই রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সংঘাতের সম্ভাবনা এখন আরো বেড়ে গেছে।
আইকে/টিএ