অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে দেশ থেকে পাচার হওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারে সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্স এই বিষয়ে অত্যন্ত সক্রিয়।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা তার কার্যালয়ে বাসস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসন্ন জাতীয় বাজেটের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেছেন, যা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট হবে।
বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথমত, বিদেশে কারা কোথায় অর্থ পাচার করেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা খুঁজে বের করছে। টাস্কফোর্স ইতোমধ্যেই এগুলো চিহ্নিত করেছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের কিছু ট্যাক্স হ্যাভেন (কর রেয়াত বা শূন্য কর) দেশে অর্থ পাচার হয়েছে। কিছু সংবেদনশীল মামলা ইতোমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অভিযুক্ত পাচারকারীদের ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এটি সরকারের প্রচেষ্টার প্রমাণ। তারা (অর্থ পাচারকারী ব্যক্তিরা) একটি বার্তা পেয়েছে যে, তারা এই ধরনের অপকর্মের মাধ্যমে বেশিদূর যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রক্রিয়া জড়িত। অর্থ পাচারকারীরা বোকা নয়, তাই সেগুলো উদ্ধার করা এত সহজও নয়। আশা করি, আমরা অর্থ ফেরত পাব, পরবর্তী সরকারকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার শাসনামলে জনগণের অর্থ লুটকারীদের ক্রোক ও জব্দকৃত সম্পদ দুটি পৃথক সার্বভৌম তহবিলে যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকার দুটি পৃথক তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি হবে ব্যাংক লুটকারীদের ক্রোককৃত সম্পদের জন্য এবং আরেকটি তহবিল হবে ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে লুট করা সম্পদের জন্য।
বর্তমানে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলো একটি আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নেই। এখন আন্তঃমন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং সরকার প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন সংশোধন করবে। টাস্কফোর্সের ক্ষমতা বাড়ানো হবে।
আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য কোনও বিধান থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরাসরি এমন কোনও বিধান থাকবে না। তবে এমন কিছু ক্ষেত্র থাকতে পারে, যেখানে সাধারণত কালো টাকা তৈরি হয়, যেমন উচ্চমূল্যের ফ্ল্যাট কম খরচে নিবন্ধিত করা।
তিনি বলেন, সরকার নিবন্ধন খরচ প্রকৃত মূল্যের কাছাকাছি করার চেষ্টা করছে, যাতে টাকা সাদা হয়। রাজস্ব সংগ্রহের প্রবাহ অক্ষুণ্ন রেখে আমরা নিবন্ধন খরচ কমানোর কথাও বিবেচনা করতে পারি।
প্রাথমিকভাবে এটি শহরে প্রয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মৌজা মূল্যায়নের জন্য ভূমি সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। সমগ্র দেশের মৌজা মূল্যায়ন পুনর্নির্ধারণ করা সহজ কাজ নয়।
আসন্ন বাজেটে এই বিষয়টি বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়লে অন্তর্বর্তী সরকার পরবর্তী সরকারকে অনুসরণীয় নীতিমালা দিতে পারে।
ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য কমাতে সরকারের সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার যেসব ব্যাংকের তহবিলের অভাব রয়েছে এবং তারল্য সংকটে ভুগছে, তাদের সহায়তা দিয়েছে। মূল বিষয় হচ্ছে- সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর আমানতকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাবেন, যদিও এতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে এমন কিছু ব্যাংককে সহায়তা করা কঠিন। কারণ তাদের তহবিল আগে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আমরা এগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছি। টাকা ছাপানোর মাধ্যমে এগুলোকে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়, বরং পর্যাপ্ত তহবিল প্রয়োজন।
এসএন