'নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন, জয় আমাদের সুনিশ্চিত'

সারাদেশে নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মানুষের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। মানুষের কাছে যান। মানুষ যাতে বুঝতে পারে বিএনপি ছাড়া আমাদের কোন উপায় নাই।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যাতে আঙ্গুল তুলে না বলতে পারে আমরা জমি দখল করেছি, চাঁদাবাজি করেছি, জায়গা দখল করেছি। জয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ। সিলেটের যেখানে বেগম জিয়া সমাবেশ করেছিলেন, সেখানে এবার তারেক রহমানকে নিয়ে দেখা হবে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশ রাইট ট্র্যাকে উঠবে।’

সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকাস্থ সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক আয়োজিত বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যতো দেরি হবে, দেশ ততো পিছিয়ে যাবে। বিনিয়োগ আসবে না, মায়ের-মেয়েরা নিরাপত্তা হারাবে, জুডিশিয়াল ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। সেজন্য দরকার একটা নির্বাচিত সরকার, যেই সরকারের পেছনে রয়েছে জনগণ।’

এসময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘তিনি লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সময় ঠিক করেছেন, এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।’ বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যখন সুযোগ পাই সিলেট আসি। কারণ হচ্ছে, শত শত বছর পূর্বে এখানে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন, সত্য, সুন্দর ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) দরগায় আমরা আসি। সারা দেশ বিদেশ হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন। কারণ তারা এই মহান পুরুষদের, যারা অন্ধকারকে আলোকিত করার জন্য মানুষকে আলোকপাত করেছিলেন, সেই মানুষগুলোকে শ্রদ্ধা জানাতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের পুণ্যভূমি। সিলেট আমাদের কাছে আরও প্রিয়, আরেকটা কারণ আছে। তা হচ্ছে আমাদের নেতা তারেকে রহমান সাহেবের শ্বশুর বাড়ি। সেজন্য আমরা এখানে আসতে আনন্দ পাই, শান্তি পাই।’
এসময় তিনি ইলিয়াস আলীসহ সকল গুম হওয়া নেতাদের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘এমনি এমনি হঠাৎ করে হাসিনা পালায় নাই, বহু মানুষের সংগ্রাম, রক্ত, ত্যাগ মিলিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হলাম। আমরা তো লড়াই করেছি গণতন্ত্রের জন্য। আমরা একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, বাকস্বাধীনতা থাকবে, নারীরা নিরাপত্তা পাবে, তরুণরা কাজের সুযোগ পাবে, মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পাবে, এমন একটা দেশ আমরা চাই। সেই দেশ তৈরির জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করেছি। আর আমাদের এই সংগ্রামের নেতা হচ্ছেন তারেক রহমান। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো অসুস্থ অবস্থায় আমাদের পরমার্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাসিনা গণতন্ত্র, ভোট, পত্রিকা বন্ধ করেছিলো। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছিল। সেই অবস্থায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র এনে নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সেই দল, যে দল স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, কর্মস্থান সৃষ্টি করতে চাই এবং বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র করতে চাই। সেজন্য ৩১ দফা দিয়েছি। শহীদ জিয়াউর রহমান যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই দেশ আমরা গড়তে চাই।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর আমরা ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। আমাদের প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ১৭শ’ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সেখানে সিলেটের অত্যন্ত সাহসী নেতা এম. ইলিয়াস আলীও রয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের জন্য বিএনপি অনেক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে।’

সিলেটের জনসভায় বক্তারা আরও যা বললেন-
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেছেন, ‘হাসিনা চলে গেছে, তার দোসররা দেশেই আছে। সচিবালয় থেকে জেলা উপজেলায় তারা আছে। তারা ভোট চায় না। নির্বাচন না দিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। এই সরকারের ভেতরে আওয়ামী লীগের আমলারা যা করছে, তাতে এই সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। তবে আমরা আমলাদের এই চক্রান্তকে প্রতিহত করবো, প্রতিরোধ করবো। অতৎপর নির্বাচন আদায় করবো।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাসিনার পতনের জন্য যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মরণ করি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা হাসিনামুক্ত হয়েছি কিন্তু ষড়যন্ত্রমুক্ত হই নাই। বিএনপির বিরুদ্ধ সবাই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা দেখতে পারছি, একটি দল যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারা একেক দিন একেক কথা বলছে। কখনো বলছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, কখনো বলছে ভোটের পরিস্থিতি হয়নি, কখনো বলছে নির্বাচন হলে অসুবিধা নাই, কখন কী বলে ঠিক নেই। তবে এটা বোঝা যায় যে, তারা সুষ্ঠ নির্বাচন চায় না।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখনো লুটের টাকা দিয়ে ঘোলা পানিতে শিকার করতে পারে। আমি সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, সবাই সচেতন থাকবেন, যাতে এই উদ্দেশ্য হাসিল না হয়।’

একই মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, ‘১৭ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সরকার গঠনের জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। কিন্তু এখনো বিএনপিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।’ তিনি বলেন, ‘আজকে যখন সর্ববৃহৎ জনপ্রিয় দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে, তখনই বিএনপিকে থামাতে ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার চলছে। এতো দিন ধরে যারা লড়াই করেছেন, তারা নিজেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার না করে সেই সমস্ত ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দিবেন। আমরা অবশ্যই গণতান্ত্রিক বিজয়ের পথে যাবো।’

বিএন‌পি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ‘১৭ বছরের নিপীড়ন ও নির্যাতন সহ্য করেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি। আজ শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে পুণ্যভূমি সিলেট থেকেই গণতন্ত্র উদ্ধারের যাত্রা শুরু হলো।’

সোমবার (৭ জুলাই) সিলেট নগরীর পাঠানঠুলাস্থ সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি’র মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বক্তরা এসব কথা বলেন।

এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
আসছে ‘রাতসাসান টু’, নিশ্চিত করলেন অভিনেতা বিষ্ণু বিশাল Jul 07, 2025
img
এনসিপিকে আমি সরকারি দলই বলি : মাসুদ কামাল Jul 07, 2025
১০ মিনিটে বাংলাদেশের আলোচিত সব খবর। Jul 07, 2025
img
সারাদেশে বৃষ্টি থাকবে, কমবে দিনের তাপমাত্রা Jul 07, 2025
img
৩৬৭ রানে ইনিংস ঘোষণা, লারার রেকর্ড না ভাঙার কারণ জানালেন মুল্ডার Jul 07, 2025
img
রাজনীতির হিসাব বদলে যাচ্ছে : রনি Jul 07, 2025
img
কক্সবাজারে টানা বৃষ্টিতে লাখো মানুষ পানিবন্দী Jul 07, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-তুরস্কসহ ৮ দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ Jul 07, 2025
img
‘তারে জমিন পার’ পেরিয়ে ‘গেমারলগ’ দিয়ে দর্শিলের নতুন সফর শুরু Jul 07, 2025
img
২০ বছর বয়সে কেন কটাক্ষের শিকার হন গায়িকা নেহা? Jul 07, 2025
img
সিরিজ জিততে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ : ইমন Jul 07, 2025
img
পরিবার থেকে সন্তানধারণের চাপ নিয়ে জানালেন অঙ্কিতা Jul 07, 2025
img
জুলাই শহীদদের আদর্শ ও প্রেরণা অনুসরণ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়া সম্ভব: উপদেষ্টা মাহফুজ Jul 07, 2025
img
আরও একবার মেসির পায়ের জাদু দেখল ফুটবল বিশ্ব, ৫ জনকে বোকা বানিয়ে জাদুকরী গোল Jul 07, 2025
মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি! ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা Jul 07, 2025
img
‘আমি এটা কখনোই করব না’, দুই কোটির প্রস্তাব ফিরিয়েছিলেন সাই পল্লবী Jul 07, 2025
img
এ দেশে থাকবে গণতন্ত্র ও ইনসাফ, এটি তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা: নাহিদ ইসলাম Jul 07, 2025
img
দিলীপ কুমারের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্ত্রী সাইরার আবেগঘন পোস্ট Jul 07, 2025
img
টলিপাড়ার দেবলীনা-তথাগত জুটি দুজনেই এগোচ্ছেন নতুন সম্পর্কে Jul 07, 2025
img
হবিগঞ্জে দুই গ্রামের সংঘর্ষে আহত ৫০, ১৪৪ ধারা জারি Jul 07, 2025