ভোটে অনিয়ম বন্ধে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগে নির্বাচন কমিশন নতুন কৌশল নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, এক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগে। কোথাও কোথাও জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের সুযোগ দিতে এবার প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য চারটি বিকল্প পদ্ধতি বিবেচনা করে পোস্টাল ব্যালটেই ভোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান সিইসি।
এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট দিতে আগে থেকেই নিবন্ধন করতে হবে। শুধু নিবন্ধিত প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররাই পোস্টাল ব্যালটে প্রথমবারের মতো অংশ নিতে পারবেন ভোটে।
তিনি বলেন, আমরা এখন অনলাইনে একটা প্লাটফরম বানাবো, মানুষের অপশন নেওয়ার জন্য, তাদেরকে প্রবাসী ভোটার হিসেবে ট্রিট করব। পরে তাদের কাছে ব্যালট পেপার পাঠাব। এটা অনেকটা কস্টলি (ব্যয়বহুল) হবে। আমরা এজন্য ডিএইচএল ও ফেডেক্সের (আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস) সঙ্গে কথা বলেছি।
একেকটা ভোটের জন্য পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।
নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের ভোটের জন্য কি এত খরচ ব্যয় করবে— এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, এটা হলো ডিএইচএল ও ফেডেক্সের খরচ। তবে সরকারি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে এটা করলে ভোটার প্রতি ৭০০ টাকা খরচ হবে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা স্পেশাল অ্যারেজমেন্ট করবে। কুইকলি যাতে হয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা যে শিডিউল দেই, নমিনেশন পেপার থেকে শুরু করে সবকিছু, প্রতীক বরাদ্দ না হলে তো আমরা দিতে পারি না। যখন প্রতীকটা বরাদ্দ তখনই না আমরা ব্যালট পেপার ছাপাই। সুতরাং এই যে ব্যালট পেপার ছাপানো থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত আমরা কমবেশি ১২ দিন মাত্র সময় পাই। কারণ এই পোস্টাল ব্যালট যখন আমরা এক্সিকিউট করব, আমাকে এই ১২ দিনের মধ্যেই ব্যালট পাঠানো, ব্যালট ফেরত আনার কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রায় ২৪ শতাংশের মতো সিস্টেম লস আছে। আমাদের মতো দেশে এটা আরো অনেক বেশি সিস্টেম লস হতে পারে।
তবে আমরা চেষ্টা করছি যে, মোটামুটিভাবে একটা সাইজাবেল নম্বর, প্রবাসীদেরকে আমরা নিয়ে আসব।
প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগে পরিবর্তন আসছে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে, যারা রিগিংয়ে (ভোট কারচুপি) সহায়তা করেছে যে সমস্ত প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আমরা তাদেরকে যথাসম্ভব পরিহার করব।
তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনের জেলা অফিসাররা সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আমরা অলরেডি এই কাজ শুরু করেছি। যথাসম্ভব আগামী নির্বাচনে তাদেরকে আমরা পরিহার করব। তাদেরকে কাজে লাগাব না।
তিনি বলেন, আমাদের চিন্তা আছে ব্যাংকের অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া। কারণ এরা তো সরকারে ছিল না। এরা তো রিগিংয়ের সহযোগী ছিল না। আমরা ব্যাংকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় রাখছি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সংস্কার কমিশনও এই প্রস্তাব করেছে। নির্বাচন কমিশনের অফিসাররা আগে তো এমন দায়িত্ব কখনো পালন করেনি। লোকাল গভমেন্টে কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিল। বহু সিটি কর্পোরেশনে তো তারা রিটার্নিং অফিসার ছিল।
তিনি বলেন, শুধু নিজস্ব কর্মকর্তা হলেই তাদেরকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দিবে না ইসি। এক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, মোটামুটিভাবে তাদের যোগ্যতা দেখে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অফিসারদের নিয়োগ করব। তবে শর্ত হলো যে, তাদেরকে উপযুক্ত কর্মকর্তা হতে হবে। বাকিটা আমাদের জেলা প্রশাসকের ওপর নির্ভর করতে হবে। যাচাই করে যাদের যোগ্য মনে হবে তাদেরকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
এমআর/টিকে