যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবস্থানের মেয়াদ সীমিত করতে একটি প্রস্তাবিত বিধি প্রকাশ করতে যাচ্ছে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)। তারা বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
১৯৭৮ সাল থেকে এফ ভিসাধারী বিদেশি শিক্ষার্থীরা ‘ডিউরেশন অব স্ট্যাটাস’ ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারতেন- অর্থাৎ যত দিন তারা পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি থাকবেন, তত দিন সেখানে অবস্থান করতে পারবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হতে যাওয়া প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটররা কেবল তাদের শিক্ষাক্রমের মেয়াদ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবেন, তবে তা সর্বোচ্চ চার বছর।
ডিএইচএস কর্মকর্তারা বলেছেন, এ নিয়মের লক্ষ্য হলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের ‘উদারতার’ সুযোগ নিয়ে ‘চিরকালের শিক্ষার্থী’ হয়ে ওঠার সমস্যা সমাধান করা।
এক বিবৃতিতে ডিএইচএসইয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আগের প্রশাসনগুলো বিদেশি শিক্ষার্থী ও অন্য ভিসাধারীদের প্রায় অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, বিপুল পরিমাণ করদাতার অর্থ ব্যয় হয়েছে ও মার্কিন নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নতুন এই প্রস্তাবিত নিয়ম অপব্যবহারের অবসান ঘটাবে ও ভিসাধারীদের থাকার সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেবে, যাতে ফেডারেল সরকার শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে তদারকি করতে পারে।
নিয়মটি কার্যকর হলে, দীর্ঘ সময় থাকতে চাইলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়মিতভাবে ডিএইচএসয়ের মূল্যায়নের মধ্যে থাকতে হবে। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সংস্থাগুলো বলছে, এ নিয়ম শিক্ষার্থীদের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করবে ও তাদের জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়াবে।
সরকারি ও বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ জন প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন প্রেসিডেন্টস অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিরিয়াম ফেল্ডব্লুম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের থাকার মেয়াদ একাডেমিক প্রগ্রামের সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে কি না, তাদের জানার অধিকার রয়েছে। তারা ইতিমধ্যেই দেশের সবচেয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি, যাদের ডিএইচএস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কঠোরভাবে তদারকি করে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষকদের সংগঠন নাফসার নির্বাহী পরিচালক ও সিইও ফান্টা অ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আরো নিরুৎসাহিত করবে, যা মার্কিন অর্থনীতি, উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার জন্য ক্ষতিকর হবে।’
এ ছাড়া ভিসা সাক্ষাৎকারে বিলম্বসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের জরিপে অংশ নেওয়া মার্কিন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৫ শতাংশ এ বছর শিক্ষার্থীদের আবেদন কমেছে বলে জানিয়েছে। গত বছর এই হার ছিল মাত্র ১৭ শতাংশ।
শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিকভাবে বড় ধাক্কা খেতে পারে, কারণ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত বেশি টিউশন ফি দেয় ও তুলনামূলকভাবে কম বৃত্তি পেয়ে থাকে।
সূত্র : পলিটিকো
এসএস/এসএন