আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ওই সময় এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে যেন নির্বাচনের তারিখের সঙ্গে না মেলে— এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এ তথ্য জানান ইসি সচিব আখতার আহমেদ। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কমিশন সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছে। সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন ইসি সচিব।
আখতার আহমেদ বলেন, কমিশন ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বাস্তব সমস্যা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নজরে এনেছে। ভোটকেন্দ্র ও সড়ক মেরামত ও সংস্কারের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছি। ফেব্রুয়ারিতে আবহাওয়া অনুকূল থাকলেও আগে থেকেই কেন্দ্রগুলোর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা জরুরি।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় নির্বাচন-সম্পর্কিত অবকাঠামো উন্নয়ন, ভোটকেন্দ্রের লজিস্টিকস, আইনশৃঙ্খলা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, স্বাস্থ্য সহায়তা এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ইসি সচিব আরও জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগেভাগে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, কমিশন প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল তৈরি করছে। এতে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক এবং সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও থাকবেন। আমরা নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি আরও জানান, দুর্গম এলাকায় পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে হেলিকপ্টার ল্যান্ডিংয়ের উপযোগী স্থান প্রস্তুতের অনুরোধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। ভোটের দিন প্রতিটি উপজেলায় এবং প্রয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়েও ক্লাস্টারভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হবে এসব টিমে থাকবেন একজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধ।
তথ্য মন্ত্রণালয় ও দেশের একটি গণমাধ্যমর নেতৃত্বে নির্বাচনী প্রচার ও জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। ইসি সংসদ টেলিভিশন ও দেশের একটি গণমাধ্যম নিউজের ফ্ল্যাশ বার্তা ব্যবহার করে ভোটার সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত করার অনুরোধও জানানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি সভায় জানান, ঋণ-খেলাপিদের তথ্য হালনাগাদ ও প্রদানের জন্য তাদের চার থেকে পাঁচ দিন সময় প্রয়োজন। এ বিষয়ে ইসি সম্মতি জানিয়েছে।
নির্বাচনী বাজেট প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, অর্থ বিভাগের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবে সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভোটকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের যথাযথভাবে নিয়োগ নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রবাসী ভোটার ও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের নতুন ব্যবস্থা চালুর কাজও চলছে বলে জানান সচিব। “আমরা পোস্টাল ভোটিংয়ের একটি ট্রায়াল অ্যাপ তৈরি করেছি, যা আগামী ১৬ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে,” বলেন তিনি।
‘শাপলা কলি’ প্রতীক সংযোজন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, কমিশন পূর্বের তফসিল সংশোধন করে কয়েকটি পুরোনো প্রতীক বাদ দিয়ে নতুন কিছু প্রতীক যুক্ত করেছে।
 কিছু প্রতীক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য আসায় কমিশন ১১৯টি প্রতীক নিয়ে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করেছে। ‘শাপলা কলি’ প্রতীক কোনো দলের দাবিতে নয়, কমিশনের নিজস্ব বিবেচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনের জন্য আটটি রাজনৈতিক দলের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ইসি তাদের মতামত শুনেছে, তবে গণভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সরকারের।
এমকে/এসএন