গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত অন্তত ১১০ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের হামলায় একদিনে আরও কমপক্ষে ১১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জনই সহায়তাপ্রার্থী ছিলেন এবং খাবারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় হওয়া হামলায় তারা প্রাণ হারান।

রোববার (১৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ)-এর সামনে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সহায়তা সংস্থা।

রাফাহর আল-শাকুশ এলাকায় এই হামলায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা সরাসরি লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের দিকে গুলি চালায়।

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগেই এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোকে “মৃত্যুকূপ” বা “মানব হত্যাযন্ত্র” হিসেবে উল্লেখ করেছিল।

হামলা থেকে বেঁচে ফেরা সামির শায়াত নামে এক ব্যক্তি বলেন, “যে ব্যাগে খাবার নেওয়ার কথা ছিল, সেটাই হয়ে গেল মরদেহ মোড়ানোর কাপড়। ওরা আমাদের নিঃসন্দেহে মৃত্যুফাঁদে ফেলেছে।”

মোহাম্মদ বারবাখ নামে আরেকজন জানান, গুলি চালিয়েছিল ইসরায়েলি স্নাইপাররা। তিনি বলেন, “ওরা আমাদের প্রতারিত করে। আগে খাবারের ব্যাগ হাতে দিতে দেয়, তারপর শিকারি যেমন হাঁসকে গুলি করে, তেমন করে গুলি চালায়।”

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানান, ইসরায়েলি সেনারা কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই গুলি চালিয়েছে। বর্তমানে জিএইচএফ-এর শুধুমাত্র একটি কেন্দ্র চালু আছে রাফাহতে। ফলে হাজার হাজার মানুষকে সেখানেই সহায়তার আশায় যেতে হচ্ছে।

গাজায় ডাক্তারদের তথ্যমতে, মে মাসের শেষ থেকে জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যন্ত ৮০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। অধিকাংশের মাথা ও পায়ে গুলি লেগেছে। আল-আকসা হাসপাতালের মুখপাত্র খালিল আল-দেগরান বলেন, “আমরা হাসপাতালে এত আহত মানুষের চাপ সামলাতে পারছি না। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ভয়াবহ ঘাটতি চলছে।”

এছাড়া গাজা শহরের তুফাহ এলাকায় জাফা স্ট্রিটে এক বাসায় বোমা হামলায় ৪ জনসহ মোট ১৪ জন নিহত হন। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় দুটি আবাসিক ভবনে হামলায় ১৫ জন নিহত হন। শাতি শরণার্থী শিবিরে হামলায় আরও ৭ জন মারা যান। বেইত হানুন শহরে ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর-পূর্ব অংশে ৫০টির মতো বোমা ফেলেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ২৫০ বার হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

এদিকে গাজায় ৬৭ জন শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মিডিয়া অফিস। ৫ বছরের কম বয়সী সাড়ে ৬ লাখ শিশু এখন মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। খাবার ও ওষুধের তীব্র সংকটে গত কয়েক দিনে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার আলোচনায় অগ্রগতি থেমে গেছে। আলোচনায় মূল বাধা— ইসরায়েলি সেনারা কতটা অংশ থেকে সরে যাবে, সেই মানচিত্র নিয়ে। হামাস বলছে, ইসরায়েলের প্রস্তাব অনুসারে রাফাহসহ প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের দখলে থেকে যাবে, যা তারা মেনে নেবে না।

হামাসের এক প্রতিনিধি বলেছেন, “এই মানচিত্রে সম্মতি দিলে গাজার অর্ধেক পুনরায় দখলকৃত এলাকা হিসেবে বৈধতা পাবে, আর পুরো ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন বন্দিশিবিরে পরিণত হবে।”

মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এক ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আরও জোরালোভাবে হস্তক্ষেপ করলে অচলাবস্থা কাটতে পারে। তবে আলোচনা এখনও পুরোপুরি থেমে যায়নি। কাতারে রোববার থেকে আলোচনায় থাকবে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদল।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে সাকিবের দুবাই ক্যাপিটালস Jul 14, 2025
img
লন্ডনে উড্ডয়নের পরই ভেঙে পড়ল বিমান Jul 14, 2025
img
মাদারীপুরে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ১ জনের Jul 14, 2025
img
ফরিদপুরে পাসপোর্ট করতে এসে আটক ৩ রোহিঙ্গা নাগরিক Jul 14, 2025
img
মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শেকৃবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ৩ Jul 14, 2025
img
গাজীপুরে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় বিএনপি নেতা কারাগারে Jul 14, 2025
img
ঐশ্বরিয়ার গুণের প্রশংসা করেছিলেন শাশুড়ি জয়া বচ্চন Jul 14, 2025
img
দিলজিতের ‘পাঞ্জাব ৯৫’ ছবি ঘিরে নতুন বিতর্ক! Jul 14, 2025
img
আরও ২ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা দিলেন মিটফোর্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা Jul 14, 2025
img
পিএসজিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতল চেলসি Jul 14, 2025
img
ক্যারিয়ার বাঁচাতে অনৈতিক কাজে অভিনেত্রী! গ্রেফতার হয়েছিলেন হোটেল থেকে Jul 14, 2025
img
উইম্বলডনে প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পেলেন সিনার Jul 14, 2025
img
পুলিশের পরিচয় দিয়ে খাদ্য কর্মকর্তাকে অপহরণ, ৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার Jul 14, 2025
img
নড়াইলে আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতাকর্মী কারাগারে Jul 14, 2025
img
জমে উঠেছে লর্ডস টেস্ট, শেষ দিনে কে হাসবে বিজয়ের হাসি? Jul 14, 2025
img
'খারাপ ব্যাটিং ও বাংলাদেশের দারুণ ফিল্ডিংয়ের কারণে আমরা হেরেছি' Jul 14, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব Jul 14, 2025
img
ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল কি না, জানালেন শেহবাজ Jul 14, 2025
img
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে: বিশ্বব্যাংক Jul 14, 2025
img
আমি সবসময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করি: শামীম Jul 14, 2025