ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থিদের বিরুদ্ধে জুলাই স্পিরিটের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করতে চায়। ফ্যাসিবাদ পতনের এই ঐতিহাসিক দিনে যারা ৩৬ জুলাই উদযাপনকে বিতর্কিত করতে চায়, তাদের এজেন্ডা ভিন্ন। তারা ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন, বিচারিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া এবং আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ‘রাজাকার’ তকমা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাই তাদের একমাত্র রাজনীতি।
ঢাবি শিবিরের প্রচার সম্পাদক মু. সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব দাবি করা হয়।
কয়েকটি গণমাধ্যমে বামপন্থিদের ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ হিসেবে উল্লেখ করারও নিন্দা জানিয়েছে ঢাবি শিবির। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ফ্যাসিবাদ পতনের এক বছরের মাথায় ফ্যাসিবাদের দোসরদের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড ও বয়ানের পুনরুৎপাদন জুলাইয়ের স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে জনবিচ্ছিন্ন চিহ্নিত বামপন্থি গোষ্ঠীকে কিছু গণমাধ্যমে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’দের মতামত বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে যা সম্পূর্ণ অসত্য; আমরা এ ঘটনারও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ঢাবি শিবিরের প্রচার সম্পাদক মু. সাজ্জাদ হোসাইন খাঁন স্বাক্ষরিত বিবৃতি বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবির আয়োজিত তিন দিনব্যাপী '৩৬ জুলাই' কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনেকগুলো ইভেন্টের পাশাপাশি আমরা ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং তথাকথিত ‘বিচার’ নামক রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার প্রকল্পকে তথ্য-প্রমাণসহ জনসমক্ষে উপস্থাপন করেছি। আমরা দেখিয়েছি—কিভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ভুয়া ও পাতানো বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।। এটি ছিল ফ্যাসিবাদের নির্মম ইতিহাস ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের অংশ।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা গেছে—কিছু বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করতে মব সৃষ্টি করেছে এবং অশালীন আচরণ প্রদর্শন করেছে। আমাদের বক্তব্যে কিছু মহল, বিশেষ করে শাহবাগ ঘরানার তথাকথিত বাম চেতনাধারীরা অস্বস্তি বোধ করেছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, তারা এই ‘মব জাস্টিস’-এর প্রবর্তক, যারা ২০১৩ সালে বিচারের নামে শাহবাগ চত্বরকে রায় ঘোষণার মঞ্চে পরিণত করেছিলো। তারা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল—যা আয়নাঘর, গুম, ক্রসফায়ার, এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির বীজ রোপণ করেছে। শাহবাগের প্রজন্ম কখনোই আইনের শাসনে বিশ্বাস করেনি। তারা আইনকে মাথা নত করতে চেয়েছে মব তৈরি করে। তারা নিজেরা কখনোই সেই বিচারকে আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখায়নি—বরং ‘রাজাকার’ তকমা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাই ছিল তাদের একমাত্র রাজনীতি। তারা আজও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য বর্ণচোরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু তারা জানে না—জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান সেই ফ্যাসিবাদকে ইতিহাসের গর্তে ছুঁড়ে ফেলেছে। আর তাদের বিভাজনের রাজনীতিও আজ ইতিহাসের জঞ্জাল।
শিবিরের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি—মত ও পথের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সকলের উচিত গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার বজায় রাখা। ইসলামী ছাত্রশিবির সব মত-পথের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে সেটা অবশ্যই যুক্তি ও সভ্য পরিবেশে হতে হবে।
আলোচিত ওই নেতাদের ছবি সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে বিবৃতিতে জানানো হয়, বামপন্থি দেউলিয়া কিছু ছাত্রসংগঠনের মবের মুখে বিচারিক হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত কিছু প্রদর্শনী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং সার্বিক শৃঙ্খলার কথা চিন্তা করে কিছু নির্দিষ্ট উপকরণ সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই— বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সর্বদাই ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা রেখে এসেছে। অতীতেও রেখেছে, আজও রেখেছে। তাই প্রশাসনের অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে আমরা প্রদর্শনীর নির্দিষ্ট অংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সরিয়ে নিতে আমরা বাধা দেইনি, বরং সম্মান জানিয়েছি।
বিবৃতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, যে শাহবাগের হাত ধরে দেশে বিচারহীনতা, মব সংস্কৃতি, গুম-হত্যা ও বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছিলো, যে শাহবাগের দৌরাত্ম্যে দেশের বিচারব্যবস্থা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, সে শাহবাগই আজ ইতিহাসের প্রান্তরে পরাজিত।
জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে শিবিরের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বিচারের নামে সংঘটিত এই ফাঁসিগুলো বিচার নয়—রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। আর এই হত্যাকাণ্ডের দায় শুধু হাসিনা সরকার নয়, শাহবাগপন্থী সুবিধাভোগী বামপন্থীরাও এ দায় এড়াতে পারে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে, ১৯৭৩ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে একদলীয় শাসনের যে ফ্যাসিস্ট বীজ রোপিত হয়েছিল—তা বাস্তবায়নে সহায়তা করেছিল দেশের বাম রাজনীতির একটি বড় অংশ। ২০০৯ সালে এসে সেই ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি ঘটে শেখ মুজিবের কন্যা খুনি হাসিনার হাত ধরে। বাম রাজনীতির এই দুরভিসন্ধিমূলক ভূমিকা দেশকে গত ১৫ বছর ধরে একদলীয় দমনমূলক শাসনের অধীন করে রেখেছে।
আমরা ‘৩৬ জুলাই’ কর্মসূচির মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ঘটে যাওয়া সকল হত্যাকাণ্ড, দমনপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রদর্শনীটি তারই প্রতীকী উপস্থাপন। কিন্তু সেটাকে বাধাগ্রস্ত করার মধ্য দিয়ে বামপন্থী সংগঠনগুলো সকল বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এফপি/ টিএ