চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পরিবহনের নতুন পাইপলাইনের প্রথম চালানেই ধরা পড়েছে বড় ধরনের ঘাটতি। কুমিল্লা ডিপোর দুটি ট্যাংকে পানি ঢুকে পড়ায় ৩৩ হাজার ৯৫৪ লিটার ডিজেলের ঘাটতির ঘটনা সামনে এসেছে। এ নিয়ে জ্বালানি খাতে চলছে তোলপাড়।
যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, পাম্পিংয়ের সময় পাইপলাইনে পানি থেকে থাকতে পারে। সেই পানির কারণেই ডিজেলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা ডিপো থেকে যমুনা অয়েলের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে ঘাটতির তথ্য স্বীকার করা হয়েছে। ৩০ জুলাইয়ের ওই প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছেন ডিপো ইনচার্জ মো. উজায়ের আহামেদ।
অন্যদিকে, কুমিল্লা ডিপোর দুইটি ট্যাংকে পানি ঢোকার ঘটনায় গত ১৬ জুলাই সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর। কমিটিকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এ পর্যন্ত তা জমা পড়েছে কি না—তা নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
জানা গেছে, ২৪ জুন পতেঙ্গা ডিপো থেকে পাইপলাইনে ডিজেল পাম্পিং শুরু হয়। ওই চালান পাঠানো হয় কুমিল্লার ১০৫ ও ১০৬ নম্বর ট্যাংকে এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ডিপোতে। তখনই কুমিল্লার দুটি ট্যাংকে পানির উপস্থিতি ধরা পড়ে।
যমুনা অয়েলের প্রধান কার্যালয়ের অপারেশন বিভাগের ডিজিএম মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, পাম্পিংয়ের সময় যে পানি ছিল, সেটিই কুমিল্লা ডিপোর দুই ট্যাংকে গিয়ে জমেছে। ঘাটতিও মূলত সেই কারণেই।
গত ১৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রকল্পটি। আগে যেখানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অঞ্চলে তেল পরিবহনে দেড় শতাধিক কোস্টাল ট্যাংকারে আগে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগতো এখন তা ১২ ঘণ্টায় নেমে আসে। খারাপ আবহাওয়া ও নৌপথে তেল পরিবহনে ঝুঁকিও কমাবে এই প্রকল্প। পরিবেশবান্ধব, ঝুঁকিমুক্ত, পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪২ কিলোমিটার পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে প্রতি ঘণ্টায় ২৬০-২৮০ মেট্রিক টন ডিজেল যাওয়ার কথা নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে। গত ২২ জুন সন্ধ্যা থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক এ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
বিপিসির তথ্যমতে, বছরে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহের সক্ষমতাসহ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত, সিস্টেম লস কমানো, নৌপথে তেল পরিবহনের বিপুল খরচ সাশ্রয়, পরিবেশ সুরক্ষা, ঝুঁকিমুক্তভাবে দ্রুততম সময়ে তেল পরিবহনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত আড়াইশ’ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা পাইপলাইন প্রকল্পে বছরে সাশ্রয় হবে ২২৬ কোটি।
প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত আড়াইশ’কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার পাইপলাইন। ভূগর্ভে স্থাপন করা এসব পাইপলাইনের ব্যাস থাকছে ১৬ ইঞ্চি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের গোদানাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার পাইপলাইন। স্ক্যাডা, টেলিকমিউনিকেশন এবং লিক ডিটেকশন করতে এই পাইপলাইনের সাথে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল লাইন সংযুক্ত রয়েছে। পতেঙ্গা থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইন গেছে ২২টি নদীর তলদেশ ছুঁয়ে। পুরো পাইপলাইন জুড়ে থাকছে ৯টি স্টেশন। আর কুমিল্লার বরুড়ায় ২১ হাজার মেট্রিক টনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্থাপন হয়েছে নতুন একটি ডিপো।
এসএন