ছবি: সংগৃহিত
লিভারপুলের কিংবদন্তি কোচ বিল শ্যাঙ্কলি মনে করতেন, ক্লাবটির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো লিগ শিরোপা। ইউরোপিয়ান খেতাব সম্মানজনক হলেও, সেটাকে মুখ্য মনে করতেন না তিনি। লিভারপুলও যেন তার সেই দর্শনই অনুসরণ করেছিল—অনেক বছর ধরে ইংল্যান্ডের শীর্ষ পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৮টি লিগ শিরোপা ছিল তাদের দখলে।
তবে সময়ের সঙ্গে সেই রেকর্ড ভেঙে দেয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২০১৩ সালে তারা নিজেদের ২০তম শিরোপা জিতে লিভারপুলকে পেছনে ফেলে দেয়। এরপর আবারও ঘুরে দাঁড়ায় লিভারপুল। ক্লাবটির পুনরুত্থানের ফল হিসেবে ২০১৯-২০ মৌসুমে আসে বহু প্রতীক্ষিত লিগ শিরোপা—অ্যানফিল্ডে ৩০ বছর পর। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, করোনার কারণে সেবার উৎসব হয় দর্শকশূন্য গ্যালারিতে।
অবশেষে ৩৫ বছরের অপেক্ষা শেষ করে আরও একবার নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা উৎসব করল লিভারপুল। টটেনহ্যামের বিপক্ষে ম্যাচে দরকার ছিল ড্র। সেটাই যথেষ্ট হতো অলরেডদের জন্য। কিন্তু ঘরের মাঠে ভরা দর্শকদের সামনে লিভারপুল পেল ৫-১ গোলের বড় জয়। তাতেই ২০২৪-২৫ মৌসুমের শিরোপা নিশ্চিত হলো আর্নে স্লটের দলের জন্য।
ম্যাচের আগেই অ্যানফিল্ড আর লিভারপুল শহর পরিণত হয় লাল সমুদ্রে। শিরোপা উৎসব করতে আসা দর্শকদের অবশ্য শুরুতেই স্তব্ধ করে দেন ডমিনিক সোলাঙ্কি। একসময় লিভারপুলের হয়ে খেলা সোলাঙ্কি হেডে গোল করে এগিয়ে দেন টটেনহামকে। অ্যানফিল্ড তখন পুরোপুরি নীরব।
যদিও তাদের লিড টিকেছে কেবল ৪ মিনিট। ম্যাচের ১৬ মিনিটে দারুণ বোঝাপড়ায় ডি-বক্সের ভেতর ডমিনিক সবোস্লাইয়ের পাস থেকে সহজ গোল লুইস দিয়াজের। ১-১ গোলে খেলায় আসে সমতা। ভিএআর চেক শেষে যখন গোলের সিদ্ধান্ত আসে, তখন পুরো স্টেডিয়াম যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
খানিক বাদেই অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের চোখ ধাঁধানো এক গোল। টটেনহাম রক্ষণের ভুলে বল পেয়েছিলেন। ডি-বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শটে ম্যাচে লিভারপুলের লিড নিশ্চিত করেন। এরপর ৩৪ মিনিটে কোডি গাকপো কর্নার থেকে জটলার মাঝে বল পেয়ে ম্যাচের স্কোরলাইন করেন ৩-১৷
জয় নিশ্চিত হলেও লিভারপুলের অপেক্ষা ছিল মোহাম্মেদ সালাহর গোলের জন্য। মিশরীয় এই তারকা দলের সবচেয়ে বড় তারকা। তবে গেল চার ম্যাচে তার পায়ে ছিল না গোল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই তাকে দিয়ে গোল করাতে মরিয়া ছিলেন সতীর্থরা। কোডি গাকপো সহজ এক সুযোগ পেয়ে নিজে গোল না করে বল বাড়ান সালাহর দিকে। কিন্তু সেটা মিস করে বসেন তিনি।
৬৪ মিনিটে সেই আরাধ্য গোলও পেয়ে যায় লিভারপুল। ডি-বক্সের ভেতর বল পেয়ে ডান পায়ের চিরচেনা ভঙ্গিমায় গোল করেন মোহাম্মেদ সালাহ। এই গোলের পরেই সার্জিও আগুয়েরোকে পাশ কাটিয়ে প্রিমিয়ার লিগে বিদেশি তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (১৮৫) গোলের রেকর্ড নিজের করে নেন সালাহ।
৭০ মিনিটে লিভারপুলের ভক্তদের আনন্দের মাত্রা বাড়ায় টটেনহামের ডেসটিনি উডোগির আত্মঘাতী গোল। ৫-১ গোলের লিডে নিশ্চিত হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ফিরছে চিরচেনা অ্যানফিল্ডে।
আরএ